তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এর পরই চীন বলেছে, লাই নিজেকে বিদেশিদের কাছে ‘বেশ্যা’ হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করছেন কিন্তু তার উদ্দেশ্য সফল হবে না।
বুধবার (৮ অক্টোবর) তারা স্বশাসিত দ্বীপটির প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এ কড়া মন্তব্য করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে বেইজিং। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একে যুক্ত করতে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগেরও হুমকি দিয়ে রেখেছে তারা। তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লাই যে চীনের অপছন্দের তালিকায় রয়েছেন তা বেইজিংয়ের মন্তব্যের স্পষ্ট বোঝা যায়। চীন তাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মনে করে, তারা আলোচনায় বসতে লাইয়ের একাধিক প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছে।
লাইয়ের ভাষ্য হচ্ছে, কেবলমাত্র তাইওয়ানের জনগণই দ্বীপটির ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার রাখে।
চলতি সপ্তাহে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে রক্ষণশীল এক মার্কিন রেডিও শো ও পডকাস্ট, সেখানে তাইওয়ানের এ প্রেসিডেন্ট বলেন, ট্রাম্প যদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তাইওয়ানের ওপর বল প্রয়োগের পরিকল্পনা থেকে সরাতে পারেন তাহলে তার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত।
ট্রাম্প ও শি এ মাসেই দক্ষিণ কোরিয়ায় এক আঞ্চলিক সম্মেলনে একে অপরের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে লাই চীনের সামরিক হুমকি ও প্রতিরক্ষায় ক্রমবর্ধমান খরচ নিয়েও কথা বলেন। এর প্রত্যুত্তরে চীনের তাইওয়ার বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, লাই ‘উল্টোপাল্টা বকছেন’ এবং তিনি যে আদতে সঙ্কট সৃষ্টিকারী ও শান্তি বিনাশকারী, সেই স্বরূপ দেখাচ্ছেন।
তারা বলেছে, গত বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে লাই ‘বেপরোয়াভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে যাচ্ছেন’। তুলনামূলক কড়া ভাষা ব্যবহার করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তিনি বিদেশিদের তোয়াজ করতে তাইওয়ানের স্বার্থ সমানে বিকিয়ে যাচ্ছেন, জনগণের রক্ত-মাংস খুবলে খাচ্ছেন, নিজেকে বেশ্যা বানাচ্ছেন এবং বিদেশি শক্তির কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন।’
চীনের এ বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাইওয়ানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চীনা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে স্বাধীন হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ধারণ করছে, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দপ্তর বলেছে, “লাই চিং-তে ও ‘তাইওয়ান স্বাধীনতা বাহিনী’ পিঁপড়া ছাড়া কিছুই নয়, যারা একটি গাছকে ঝাঁকাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে চলে যাবে।”
শুক্রবার লাই তাইওয়ানের জাতীয় দিবসের ভাষণ দেবেন। গত বছর এ আয়োজনের পর চীন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক করতে’ দ্বীপটির আশপাশে একদিনের যুদ্ধ মহড়া চালিয়েছিল। লাই বলেছিলেন, রিপাবলিক অব চায়না (তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম) এবং পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (চীনের আনুষ্ঠানিক নাম) কেউ কারও অধীনস্ত নয়।
মাও জেদং-এর কমিউনিস্টদের কাছে গৃহযুদ্ধে হারের পর রিপাবলিক অব চায়নার সরকার ১৯৪৯ সালে তাইওয়ানে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এই দুই অংশের মধ্যে কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি; কেউ কাউকে স্বীকৃতিও দেয়নি।