কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ৫,০০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু দুই নেতার সাক্ষাতের আগের রাতেই তাকে দেশে ফিরে যেতে হয়, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে গুরুত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, এখন তার মনোযোগ ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের দিকে দিতে হবে। এই ঘটনায় ইউক্রেনের কূটনীতিকরা হতাশ, এবং কেউ কেউ রীতিমতো ক্ষুব্ধ। কিছু কর্মকর্তা বলছেন, এখন তারা নিশ্চিত নন যে জেলেনস্কির আগামী সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের হেগে ন্যাটো সম্মেলনে যাওয়া উচিত কি না-কারণ সেখানে ট্রাম্প থাকবেন উপস্থিতি নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে।
একজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা এক ধরনের স্থায়ী ঝুঁকি যে ইউক্রেন ঘটনাপ্রবাহের শিকার হয়ে পড়ছে, আর ট্রাম্পের মনোযোগ বেশি সময় থাকে না। পুতিন এটা জানে-তাই গত রাতে ইউক্রেনে এত বড় হামলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই শীর্ষ সম্মেলনের আগে অনেক রকম প্রতিশ্রুতি ছিল, তার মধ্যে নতুন মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের কথাও ছিল।’ কিন্তু ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে কোনো সময়সীমা দেননি, যার মধ্যে পুতিনকে যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হতো।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ জানিয়েছেন, ট্রাম্প ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে জি-৭ সম্মেলনে মার্কিন সভাপতির আকস্মিক প্রস্থান সবকিছু পাল্টে দেয়। জেলেনস্কি ইউক্রেনের জন্য নির্ধারিত একটি বিশেষ বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে গ্রুপের অন্য নেতারা ছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিরতিতে পুতিনকে রাজি করাতে ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়া।
কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎই সম্মেলন ছেড়ে যাওয়ায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। ট্রাম্পের সমর্থন ধরে রাখার চাপের কারণে ইউক্রেন খোলাখুলিভাবে কিছু বলতে পারছিল না। এ অবস্থায় হতাশা আরও বেড়ে যায়, যখন জেলেনস্কি কানাডার উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময়ই খবর আসে-রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। জি-৭-এর আয়োজক কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে বৈঠকে জেলেনস্কি ট্রাম্পের অনুপস্থিতি নিয়ে কিছু বলেননি।
তবে হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘রাশিয়া যখন শান্তি আলোচনায় রাজি নয়, তখন আমাদের সেনাদের দৃঢ়ভাবে টিকে থাকতে হলে মিত্রদের সাহায্য দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।’ জেলেনস্কি মনে করেন, জি-৭ সম্মেলন ছিল ট্রাম্পের ওপর সম্মিলিত চাপ প্রয়োগের এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিমান প্রতিরক্ষা ও অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বড় সুযোগ, যা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র বিক্রি করতে রাজি-এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও, ট্রাম্প মাঝে মাঝে বলছেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিলে যুদ্ধ শুধু দীর্ঘায়িত হবে। যদিও তিনি নিজেই যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সপ্তাহে তিনি আবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জেলেনস্কি আরও চেয়েছিলেন, রাশিয়ার তেল বিক্রি থেকে আয়ের ওপর চাপ বাড়াতে প্রতি ব্যারেল তেলের মূল্যসীমা ৬০ ডলার থেকে কমিয়ে ৪৫ ডলারে নামিয়ে আনা হোক। জি-৭ দেশগুলো আগে থেকেই এমন মূল্যসীমা চালু করেছে, কিন্তু এটি কার্যকর করতে হলে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থন দরকার।
সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংকটের কারণে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে দাম পড়তি, ফলে এখন তেলের দামের সীমা কমানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন স্বীকার করেছেন, সীমা কমাতে এখন ততটা চাপ নেই।
জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে তিনি আগ্রহী নন। তার মতে, ‘প্রথমে ইউরোপীয়দের এগোতে হবে’ এবং তিনি অভিযোগ করেন, নিষেধাজ্ঞা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে’।
এদিকে, ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার রাশিয়ার তেল আয়ে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছেন। তিনি ২০টি রাশিয়ান তেল ট্যাঙ্কারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন এবং রাশিয়ান তেল পরিবহনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, যা ডাউনিং স্ট্রিট মঙ্গলবার জানিয়েছে।
কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ‘দৃঢ়ভাবে’ বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্ব হ্রাস করার জন্য অপরিশোধিত তেলের দামের উপর বিধিনিষেধ জোরদার করা উচিত।