যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানের ভিত্তি হতে পারে, এমন মন্তব্যই করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কিয়েভ এই প্রস্তাব না মানলে ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনী সামনে এগোতেই থাকবে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের অবসানের জন্য ইউক্রেনকে এই শান্তি প্রস্তাব মানতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে। মূলত এই শান্তি প্রস্তাবে সামরিক জোট ন্যাটো, সংঘাতরত অঞ্চল এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি নিয়ে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দাবিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে পুতিন বলেন, আমার বিশ্বাস, এই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি আরও জানান, ২৮ দফার এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়নি, তবে মস্কো পরিকল্পনার একটি কপি হাতে পেয়েছে।
পুতিন বলেন, ইউক্রেন এই পরিকল্পনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে কিয়েভ বা ইউরোপীয় শক্তিগুলো কেউই বুঝতে পারছে না যে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে আরও সামনে অগ্রসর হচ্ছে এবং শান্তি না এলে এই অগ্রগতি চলতেই থাকবে।
বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ এলাকা — এক লাখ ১৫ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার — নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া। মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের পুরো অঞ্চল (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক), পাশাপাশি খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় মস্কো।
পুতিন জানান, আলাস্কায় আগস্টের শীর্ষ বৈঠকের আগে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল এবং ওয়াশিংটনের অনুরোধে রাশিয়া কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ও দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেনের সম্মতি আদায় করতে পারেনি। ইউক্রেন এটি প্রত্যাখ্যান করেছে’। পুতিন আরও দাবি করেন, গত ৪ নভেম্বর রুশ বাহিনী ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহরের প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও কিয়েভ এ দাবি অস্বীকার করেছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেন মার্কিন পরিকল্পনা না মানলে এমন অগ্রগতি ফ্রন্টলাইনের আরও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দেখা যাবে। তার ভাষায়, ‘কিয়েভ যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় না বসে এবং তা প্রত্যাখ্যান করে, তবে কিয়েভ এবং ইউরোপের যুদ্ধবাজরা বুঝবে— কুপিয়ানস্কে যা ঘটেছে, তা সামনে আরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ঘটবে।’
তিনি আরও বলেন, এবং মোটের ওপর, এটি আমাদের জন্য সুবিধাজনক। তবে রাশিয়া শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চাপের মুখে ইউক্রেন হয় মর্যাদা ও স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি, নয়তো ওয়াশিংটনের সমর্থন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

