ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করাই এখন ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: জেলেনস্কি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ১১:১৬ এএম
জেলেনস্কি ও ম্যাঁখো। ছবি- রয়টার্স

ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে চলমান আলোচনা সামনে এগোলেও দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্যারিসে ইউরোপীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের মূল অগ্রাধিকার হলো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং এমন কোনো সমঝোতায় না যাওয়া, যা মস্কোর দখলদারিত্বকে বৈধতা দেবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভূখণ্ডের প্রশ্ন’। তিনি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সতর্ক করে বলেন, এমন কোনো ফল যেন না আসে, যা ‘রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধকে পুরস্কৃত’ করে।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা প্যারিসের এই আলোচনায় যুক্ত হয়েছিলেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গেও তাদের কথা হয়। আর এটি যুদ্ধ অবসানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করেছে।

জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের আগের দিনের বৈঠকের অগ্রগতিও আলোচনায় পর্যালোচনা করা হয়েছে। ইউরোপজুড়ে আরও বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁখো বলেন, ইউক্রেনের সীমান্ত কোথায় হবে— সে সিদ্ধান্ত কেবল কিয়েভই নেবে। তিনি ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধ শেষের কোনো চুক্তি এলে ইউক্রেনের সম্ভাব্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর আরও আলোচনা হবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন। এক বিবৃতিতে তিনি জেলেনস্কির ‘গঠনমূলক অবস্থানের’ প্রশংসা করেন এবং রাশিয়াও ভবিষ্যৎ আলোচনায় ‘নিজেদের বাস্তবসম্মত ভূমিকা’ রাখবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।

এদিকে আলোচনায় ভূখণ্ডের প্রশ্নই এখন সবচেয়ে সংবেদনশীল ইস্যু হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনার মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সেই বৈঠকের পর তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে চান। তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন— ভূখণ্ড ছাড়ের কোনো প্রস্তাব কিয়েভ গ্রহণ করবে না।

জেলেনস্কির উপদেষ্টা রুস্তেম উমেরভ আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা আমেরিকাকে জানিয়েছি- রাশিয়া আমাদের ভূমি দখল করে রাখবে, আর আমরা সেটাকে বৈধতা দেব- এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়া মানে আন্তর্জাতিক আইন নেই, আর যে কেউ শক্তি প্রয়োগ করে অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব মুছে দিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা একটি কঠিন আলোচ্য বিষয়, কারণ ‘আমরা ইউক্রেন ও ইউরোপ— দুই পক্ষের নিরাপত্তাই চাই’। তিনি মনে করেন, রাশিয়া যদি সত্যিই আলোচনায় আসে, তবে আলোচনা ‘অত্যন্ত কঠিন’ হবে, কারণ মস্কো এখনো মনে করে ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া (যুদ্ধ) শেষ করার চেয়ে কম ব্যয়বহুল’।

ব্রাসেলস থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়াকে বড় ধরনের কোনো ছাড় না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের অবস্থান— ‘ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়ার’ বদলে যদি কোনো সমাধান আসে, সেটি হতে পারে ‘ভূমি বিনিময়’ এবং সেটিও কেবল ইউক্রেনের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।

গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনা গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ খসড়াটিতে এমন অনেক প্রস্তাব রয়েছে, যা মস্কোর পক্ষে যায়। সেখানে ইউক্রেনের সেনা সদস্যসংখ্যা সর্বোচ্চ ৬ লাখে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার ওপর কোনো সীমা রাখা হয়নি। এছাড়া কিয়েভকে কখনো ন্যাটোতে না নেয়ার শর্ত এবং রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড মস্কোর হাতেই রেখে দেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে।