লন্ডনে বাংলাদেশি দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের অপরাধ দমন সংস্থা।
এই দুই ব্যক্তি হলেন আহমেদ শায়ান রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান। তারা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
শুক্রবার (২৩ মে) ব্রিটেনের বিখ্যাত পত্রিকা গার্ডিয়ান এই খবর প্রকাশ করেছে।
জব্দ হওয়া এই সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৯০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড। এক পাউন্ড ১৬৫ টাকা হিসেবে এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এই দুই ব্যক্তি এখন যুক্তরাজ্যের আদালতের নির্দেশে এসব সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন না। জব্দ করা সম্পত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লন্ডনের অভিজাত এলাকা গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।
দ্য গার্ডিয়ান ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানায় যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি সম্পত্তি এরইমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।
এসব সম্পত্তি বিদেশি দ্বীপ অঞ্চলের নামে তৈরি কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে। প্রতিটি সম্পত্তির দাম ১২ লাখ থেকে শুরু করে ৩৫ কোটি পাউন্ড পর্যন্ত।
শায়ান ও শাহরিয়ার রহমান হচ্ছেন ধনী ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা। সালমান ছিলেন শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার সরকার পতনের সময় তাকে আটক করা হয় এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে।
যুক্তরাজ্যের অপরাধ তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন এবং ভবিষ্যতে আরও সম্পত্তি জব্দ করা হতে পারে।
জব্দ করা বাড়িগুলোর মধ্যে একটি হলো লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেন্সে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল বাড়ি, যেখানে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা একসময় বসবাস করেছেন বলে জানিয়েছে আরেকটি পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। এই বাড়ির মূল্য ৭ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড।
বাংলাদেশের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তদন্তে শেখ রেহানার মেয়ে ও সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তিনি এরইমধ্যে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের প্রধান কর্মকর্তা ডানকান হেমস বলেন, আমরা চাই, যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন দ্রুত সব সন্দেহভাজন সম্পত্তি জব্দ করে।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই ঘটনায় সালমান রহমান প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো করপোরেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে, তবে এখনো তাদের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শায়ান রহমানের একজন মুখপাত্র বলেন, তার মক্কেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন এবং যুক্তরাজ্যে তদন্তে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। অনেক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝে বিচার করবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
আপনার মতামত লিখুন :