শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

বিবিসির প্রতিবেদন

ট্রাম্পের শুল্কে থমকে যেতে পারে ভারতের প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি-সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি-সংগৃহীত

ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে ভারতের রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। বুধবার (৩০ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যে এই শুল্ক ও জরিমানা কার্যকর হবে।

কারণ, ভারত এমন সময় রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে, যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক। পোস্টে শুধু ২৫ শতাংশ শুল্ক নয়, এর পাশাপাশি নয়াদিল্লির ওপর ‘অনির্দিষ্ট জরিমানা’ আরোপ করা হবে বলে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই জরিমানার পরিমাণ বা ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই জরিমানার বিস্তারিত তথ্য জানা গেলে তবেই বোঝা যাবে ভারতের ওপর প্রকৃত প্রভাব কতটা হবে।

রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে হারে শুল্ক আরোপ করছে, তা আমাদের আগের অনুমানের চেয়েও অনেক বেশি। ফলে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কতটা ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করছে জরিমানার পরিমাণের ওপর।’

এর আগেই আইসিআরএ ভারতের এই অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান নমুরা জানিয়েছে, এই শুল্ক ভারতের প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের জিডিপি দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে।

এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের খবর সামনে আসতেই ভারতের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দিনের শুরুতেই সূচক পড়ে যায়। একটি প্রতিষ্ঠানের ফান্ড ম্যানেজার নীলেশ শাহ বলেন, ‘বাজারে ভাবনা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে একটা ইতিবাচক বাণিজ্য চুক্তি হবে। কারণ দুই দেশের কৌশলগত স্বার্থ একসঙ্গে মেলে।’

সম্প্রতি দুই দেশ কয়েক দফা আলোচনায় বসেছে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে। ভারতের সঙ্গে বছরে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে মদ ও মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক কমিয়েছে ভারত।

২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত জরিমানা যোগ হওয়ায় ভারত এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক রাহুল আহলওয়ালিয়া। তার মতে, চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে বিনিয়োগ এবং শিল্পায়নের দৌড়ে ভারত পিছিয়ে পড়তে পারে।

চীনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ১৪৫ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। ১২ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি করতে দুই দেশের সময়সীমা ঠিক হয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র জুলাইয়ে চুক্তি করেছে, যেখানে ২০ শতাংশ শুল্কে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।

এ অবস্থায়, ভারতের পণ্যে শুল্ক বেশি হওয়ায়, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন রপ্তানি খাতে ভারতের যে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইওয়াই ইন্ডিয়ার বাণিজ্য নীতি বিশেষজ্ঞ অগ্নিশ্বর সেন বলেন, ‘এই শুল্ক  স্থায়ী হলে সামুদ্রিক পণ্য, ওষুধ, বস্ত্র, চামড়া ও গাড়ি শিল্পে বড় প্রভাব পড়বে। এই খাতগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য অনেক বেশি।’

ট্রাম্পের ঘোষণায় ভারতের অর্থনীতিবিদ, রপ্তানিকারক ও শিল্প নেতাদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির এফআইসিসিআইর প্রেসিডেন্ট হর্ষবর্ধন আগারওয়াল বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। এর ফলে রপ্তানিতে স্পষ্ট প্রভাব পড়বে। তবে আমরা আশাবাদী, এটি স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্ত হবে এবং দ্রুত একটি স্থায়ী বাণিজ্য চুক্তি হবে।’

ভারতের রপ্তানিকারক ফেডারেশনের প্রধান ড. অজয় সাহাই বলেন, ‘এই শুল্কের ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সঙ্গে মার্কিন ক্রেতাদের মধ্যে দাম নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। রপ্তানিকারকরা কতটা শুল্কের বোঝা নিজেরা বইতে পারবেন, সেটা এখন বড় প্রশ্ন।’

শুল্ক মূলত আমদানি করা পণ্যের ওপর সরকার যে কর বসায় সেটি। এই করের কারণে সেই পণ্য বিদেশে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে এবং চাহিদা কমে যায়। ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের হয় দাম কমাতে হয়, নয়তো তাদের মুনাফা কমে যায়।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ট্রাম্পের ঘোষণার প্রভাব তারা পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী। তবে কৃষি, দুগ্ধপণ্যসহ ছোট ও মাঝারি ব্যবসার স্বার্থরক্ষাকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে।

যদিও ট্রাম্প ভারতকে ‘ভালো বন্ধু’ বলেন, তবুও তিনি ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছেন। এমনকি বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালেও ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে মিলে যা খুশি করুক, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মৃত অর্থনীতিকেও একসঙ্গে ডুবিয়ে দিতে পারে। আমাদের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন একটা হয় না, কারণ তাদের শুল্ক খুবই বেশি—বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।’

তবে উত্তেজনার মধ্যেও আলোচনা চলছে। আগস্ট মাসজুড়েই আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদল আগামী মাসে ভারতে আসবে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে। অনেকে আশাবাদী, এই শুল্ক পরে কমে যেতে পারে এবং ২৫ শতাংশ শুল্ক সাময়িকও হতে পারে। দুই দেশ আগামী শরতের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!