বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল করতে ৫ লাখ টন চাল শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বাজারে তৈরি হয়েছে ব্যাপক তোলপাড়। এই সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ভারতে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের রপ্তানির হিড়িকে দেশটির অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থায় আকস্মিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।
মূলত দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি চাল আমদানির ওপর থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়। বুধবার (১৩ আগস্ট) এই ঘোষণা আসার পর থেকেই ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশে চাল পাঠাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
তবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগে থেকেই এই সিদ্ধান্তের আভাস পেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীরা জানান, শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তারা আগে থেকেই পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত সংলগ্ন গুদামগুলোতে চাল মজুত করে রেখেছিলেন।
এই সুযোগকে কাজে লাগাতে গিয়েই ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দামে উল্লম্ফন ঘটেছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বর্ণা জাতের চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপিতে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, মিনিকেট চালের দাম ৪৯ থেকে বেড়ে ৫৫ রুপি, রত্না ৩৬-৩৭ রুপি থেকে ৪১-৪২ রুপি এবং সোনা মসুরির দাম ৫২ থেকে বেড়ে ৫৬ রুপিতে পৌঁছেছে।
ভারতের চাল বিপণন প্রতিষ্ঠান রাইসভিলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুরজ আগরওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বুধবার দুপুরে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সেই রাত থেকেই ভারতের চাল বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘খরচ ও যাতায়াতের সুবিধার কারণে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তই রপ্তানির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক। একারণে উত্তরপ্রদেশ এমনকি দক্ষিণ ভারতের চালকল মালিকরাও এই পথেই বাংলাদেশে চাল পাঠাচ্ছেন।’
বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশটিতে চালের দাম প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে গত অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছিল।
এদিকে, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এই পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেশব কুমার হালদার বলেন, বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিল। বাংলাদেশের এই বিপুল পরিমাণ আমদানির আদেশ ভারতীয় বাজারে নতুন চাহিদা তৈরি করেছে, যা বৈশ্বিক দামের পতনকে আংশিকভাবে সামাল দিতে এবং বাজারকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে।
অন্ধ্রপ্রদেশের এক চালকল মালিক সি কে রাও জানান, তার ট্রাকগুলোও বৃহস্পতিবার সকালেই বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।