ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

আমরা মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি: রাহুল

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ১১:২৫ পিএম
কংগ্রেস ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের সংসদে প্রস্তাবিত নতুন তিনটি বিলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেস ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এ প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেছেন। বিলগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সরকারি সদস্যরা যদি কোনো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার অবস্থায় টানা ৩০ দিন কারাগারে থাকেন, তবে দোষী সাব্যস্ত না হলেও তাদের পদ থেকে সরানো যাবে।

বুধবার (২০ আগস্ট) লোকসভায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ বিলগুলো উপস্থাপন করেন। এ সময় বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা কাগজ ছুড়ে প্রতিবাদ জানান। উপস্থাপনের পর বিলগুলোকে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়।

তবে বিরোধীরা এরই মধ্যে প্রস্তাবগুলোকে ‘অগণতান্ত্রিক’, ‘অসংবিধানিক’ ও ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ভোটে হারাতে না পারায় বিজেপি ভুয়া মামলা দিয়ে বিরোধী রাজ্য সরকারগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের কারাগারে পাঠাবে, টানা এক মাস আটক রাখবে এবং শেষ পর্যন্ত জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করবে।

লোকসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমরা যেন মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি। তখন রাজা যাকে খুশি সরিয়ে দিতেন। এখন নির্বাচিত প্রতিনিধির কোনো মর্যাদা থাকছে না।’

মোদীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যদি রাজা আপনার চেহারা পছন্দ না করেন, তবে তিনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) মামলা দিতে বলবেন। আর ৩০ দিনের মধ্যে একজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মানুষকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’

রাহুল আরও বলেন, ‘আমরা যেন ভুলে না যাই কেন নতুন উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হচ্ছে। গত মাসে জগদীপ ধনকড় হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। সরকারি ব্যাখ্যায় বলা হয়, তিনি অসুস্থতার কারণে পদ ছাড়েন। কিন্তু বিরোধী দল দাবি করছে, এ পদত্যাগ বিজেপির চাপের ফল।’

এনডিটিভির বরাত দিয়ে রাহুল জানান, কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল তাকে ফোন করে ধনকড়ের পদত্যাগের খবর জানান এবং এর পেছনে বড় কারণ রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন।

সংসদ অধিবেশনে কালো টি-শার্ট পরে হাজির হয়ে রাহুল গান্ধী প্রতিবাদের বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘এটি আসলে যারা সংবিধান আক্রমণ করছে, তাদের সঙ্গে যারা সংবিধান রক্ষা করছে তাদের লড়াই।’

প্রস্তাবিত বিলকে ঘিরে শুধু রাহুল নন, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এবং আইনজীবী ও সংসদ সদস্য অভিষেক মনু সিংভি-সহ একাধিক বিরোধী নেতা তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আগামীকাল যদি কোনো মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় এবং তিনি দোষী প্রমাণিত না হয়েও শুধু ৩০ দিনের জন্য আটক থাকেন, তাহলে কি তাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করা হবে?’

অভিষেক মনু সিংভি মন্তব্য করেন, ‘এভাবে পক্ষপাতদুষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করা যাবে। ভোটে হারাতে না পারলেও স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরানো সম্ভব হবে। অথচ কোনো ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রীকে স্পর্শও করা হবে না।’

বিরোধীরা দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উদাহরণ টেনে বলেন, কথিত মদ নীতি দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে রাখা হয়, অথচ এখনো তার বিচার শুরু হয়নি। তাদের অভিযোগ, নতুন আইন কার্যকর হলে একই কৌশল ব্যবহার করে বিজেপি আরও বিরোধী নেতাদের রাজনৈতিকভাবে অচল করে দেবে।