ঢাকা সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মোদির আমলে বেড়েছে ভারতের গরুর মাংস রপ্তানি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
প্রতীকী ছবি

ক্ষমতায় আসার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘গোলাপী বিপ্লব’ নামে আখ্যায়িত গরুর মাংস রপ্তানির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন, তারা দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য গরুর মাংস ব্যবসাকে উৎসাহিত করছে। তখন মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে গরুর মাংস রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং মোদির শাসনামলে ২০১৪ সাল থেকে গরুর মাংস রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের গরুর মাংস শিল্প বন্ধ করা এতটা সহজ নয়। কারণ গরু জবাই সংক্রান্ত একক কোনো আইন দেশটিতে নেই। ফলে মানুষ নানা উপায়ে আইন এড়িয়ে এমন সব রাজ্যে গরু পাচার করছে, যেখানে জবাইয়ের শাস্তি নেই বা খুবই কম। এতে কার্যত পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

ভারতীয় ওয়েবসাইট মুসলিম মিরর জানিয়েছে, বর্তমান ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ। প্রতি বছর এ খাত থেকে ভারতের আয় প্রায় ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। শীর্ষ তালিকায় প্রথমে ব্রাজিল, এরপর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রয়েছে।

ভারতে গরুর মাংস রপ্তানি শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। তবে মোদির আমলে গত এক দশকে এ খাতের প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে। বর্তমানে ভারত ৬৫টি দেশে গরুর মাংস রপ্তানি করছে। ভারতীয় মাংসের বিশেষ চাহিদা রয়েছে, কারণ এটি মূলত প্রাকৃতিক চারণভূমিতে খাওয়ানো মহিষ থেকে আসে।

তবে গরুর মাংস বনাম মহিষের মাংস নিয়ে দেশটিতে সবসময় বিতর্ক বিরাজমান। বলা হয়, ভারতের মাংস রপ্তানির মূল অংশই মহিষের মাংস। দেশটিতে ১১ কোটি ৫০ লাখ মহিষ রয়েছে, যা বিশ্বের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন মাংস উৎপাদিত হয় এ মহিষ থেকে।

অন্যদিকে গরুর মাংসপন্থীরা যুক্তি দেন, ভারতে বর্তমানে প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ গরু আছে এবং দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুধ উৎপাদনকারী। বেশিরভাগ গরুই বয়স শেষে দুধ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এসব গরু গোশালায় না রেখে শেষমেশ চামড়া ও মাংস রপ্তানির কাজে লাগানো হয়। যদিও হিন্দু সমাজের অনেকে দাবি করেন রপ্তানি কেবল মহিষের মাংসের, বাস্তবে ভারতের মাংসশিল্পের অনেকেই বলছেন, লাভজনক এই শিল্পকে গরুর মাংসও সমর্থন দিচ্ছে।

গরুর মাংস রপ্তানিতে বিশাল ব্যবসায়িক সুযোগ থাকায় হিন্দুরাও ক্রমশ এ ব্যবসায় আকৃষ্ট হচ্ছেন। বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোতে রপ্তানি থেকে বিপুল অর্থ আয় হচ্ছে, যা হিন্দু ব্যবসায়ীদের টেনে আনছে এ খাতে। ভারতের ছয়টি বৃহত্তম মাংস রপ্তানিকারকের মধ্যে চার জনই হিন্দু উদ্যোক্তা। এরা হলেন: শতীশ ও অতুল সাভারওয়ালের মালিকানাধীন আল-কবীর এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড, সুনীল কপুরের মালিকানাধীন অ্যারাবিয়ান এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড, মদন অ্যাবোটের মালিকানাধীন এমকেআর ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড এবং এএস বিন্দ্রার মালিকানাধীন পিএমএল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রপ্তানি করা প্রায় সব গরুর মাংসের ওপরই হালাল সার্টিফিকেশনের সিল দেওয়া হয়। অথচ বিজেপি সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে হালাল সার্টিফিকেশন নিষিদ্ধ করেছে।