ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কারুর জেলায় থালাপতি বিজয়ের রাজনৈতিক দলের জনসভায় ভয়াবহ পদদলনে এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের নিহতের খবর জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।
এরইমধ্যে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিজয়। তিনি লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি অসহ্য, অবর্ণনীয় যন্ত্রণা এবং কষ্টে কাতরাচ্ছি যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
বিজয় আরও লেখেন, ‘কারুরে প্রাণ হারানো আমার প্রিয় ভাইবোনদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
এদিকে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ১০ শিশু এবং ১৭ জন নারী রয়েছেন।
পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জনসভায় ভিড়ের চাপে কয়েকজন অজ্ঞান হয়ে পড়লে হুড়োহুড়ি শুরু হয় এবং মুহূর্তেই তা ভয়াবহ পদদলনের ঘটনায় রূপ নেয়।
এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, সভাস্থলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সভায় প্রায় ছয় ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছান বিজয়। এর মধ্যেই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এদিকে, এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অতিমাত্রায় ভিড় ও গরমে মানুষ যখন দমবন্ধ হয়ে পড়ছিলেন, তখন বিজয় তার বক্তব্য থামিয়ে ভিড়ের দিকে পানির বোতল ছুড়ে দিতে শুরু করেন।
এ ঘটনার পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তামিলনাড়ু সরকারের কাছ থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন গভীর শোক প্রকাশ করে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদীশন এই তদন্ত পরিচালনা করবেন।
এরইমধ্যে নিহতদের পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ রুপি এবং হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর আহতদের জন্য এক লাখ রুপি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কারুরে রাজনৈতিক সভায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি রইল সমবেদনা, আর আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
ঘটনার পর বিজয় তিরুচি বিমানবন্দর থেকে চেন্নাই ফিরে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে কোনো মন্তব্য করেননি, ক্যামেরাও এড়িয়ে চলেন। পরে চেন্নাই পৌঁছে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক মর্মাহত, প্রচণ্ড কষ্টে আছি।’
এর আগেও বিজয়ের জনসভা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। চলতি মাসেই তিরুচিতে তার প্রথম জনসভায় ভক্ত ও কর্মীদের ঢল নামায় পুরো শহর যানজটে অচল হয়ে পড়ে। ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগে প্রায় ছয় ঘণ্টা।
সেই ঘটনায় সতর্ক হয়ে পুলিশ এই জনসভায় ২৩টি শর্ত দিয়েছিল। কনভয়ে যোগ না দেওয়াসহ গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের অনলাইনে জনসভার কার্যক্রম অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বিজয়ের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও এসব শর্তের বেশিরভাগই মানেননি সমর্থকেরা। শিশু ও নবজাতককেও নিয়ে আসা হয়েছিল সভায়।
এ বিষয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্ট মন্তব্য করে বলেছিল, ‘কোনো অঘটন ঘটলে তার দায়ভার কে নেবে? দলীয় সভাপতি হিসেবে বিজয়কে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন