ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ভারতে মারা গেলেন কেনিয়ার ‘রহস্য মানব’ রাইলা ওডিঙ্গা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম
রাইলা ওডিঙ্গা। ছবি- সংগৃহীত

আফ্রিকার প্রভাবশালী রাজনীতিক ও কেনিয়ার প্রবীণ বিরোধীদলীয় নেতা রাইলা ওডিঙ্গা ভারতের কেরালায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। জাতিগত রাজনীতি ও রাজনৈতিক সমঝোতার অভিযোগের পরও জনপ্রিয়তা অটুট থাকায় তাকে কেনিয়ার ‘রহস্যময় মানুষ’ বলে অভিহিত করা হতো।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে কেরালার দেবমাথা হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ওডিঙ্গা দক্ষিণ ভারতের কেরালার কোচি শহরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সকালে হাঁটাহাঁটির সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে তখন ছিলেন বোন, মেয়ে, ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ভারতীয় ও কেনিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। পরে দ্রুত তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ তথ্য জানিয়েছেন কেরালার এর্নাকুলাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণন এম।

ওডিঙ্গার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। ভারতের স্থানীয় পত্রিকা মাতৃভূমি প্রথমে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে।

মৃত্যুসংবাদ কেনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো নাইরোবির কারেন উপশহরে ওডিঙ্গা পরিবারের বাড়িতে গিয়ে শোক জানিয়ে আসেন।

রয়টার্স জানায়, হাজারো সমর্থকও তার বাসভবনে ভিড় করেন। অনেকেই কাঁদছিলেন, কেউ কেউ গাছের ডাল নাড়িয়ে প্রথাগতভাবে ‘অশুভ দূর’ করার আচার পালন করছিলেন। আল-জাজিরার প্রতিবেদক ক্যাথেরিন সোই বলেন, ‘ওডিঙ্গা ছিলেন কেনিয়ার রাজনীতির এক রহস্যময় ব্যক্তিত্ব।’

১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া রাইলা ওডিঙ্গা ছিলেন কেনিয়ার প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি জারামোগি ওগিঙ্গা ওডিঙ্গার ছেলে। স্বাধীনতার পরের দশকগুলোতে তিনি দেশের রাজনীতিতে অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠ হয়ে ওঠেন। লুও জাতিগোষ্ঠীর এই নেতা তরুণ বয়সে বামপন্থি আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের ছেলের নামও রেখেছিলেন ‘ফিদেল’।

সমর্থকরা তাকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘বাবা’ (পিতা)। জাতিগত রাজনীতি ও রাজনৈতিক সমঝোতার অভিযোগ সত্ত্বেও তার জনপ্রিয়তা অটুট ছিল। এই রহস্যময় ব্যক্তিত্বের জন্যই তাকে লুও ভাষায় বলা হতো ‘আগওয়াম্বো’, অর্থাৎ ‘রহস্যময় মানুষ’।

রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে তাকে একাধিকবার কারারুদ্ধ হতে হয়। ১৯৮২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মোইয়ের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হন এবং কয়েক বছর কারাভোগ করেন। মুক্তির পর ১৯৯২ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওডিঙ্গা। এরপর ১৯৯৭, ২০০৭, ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে প্রতিবারই পরাজিত হন।

ওডিঙ্গার মৃত্যুর খবর পেয়ে কেনিয়া ও আফ্রিকার শীর্ষ নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। কেনিয়ার সাবেক প্রধান বিচারপতি ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডেভিড মারাগা এক্সে লিখেছেন, ‘রাইলা ওডিঙ্গা ছিলেন দেশপ্রেমিক, প্যান-আফ্রিকানবাদী এবং গণতন্ত্রের অক্লান্ত যোদ্ধা। তিনি শুধু কেনিয়াকে নয়, আফ্রিকার রাজনীতিক ইতিহাসকেও গড়ে দিয়েছেন।’

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদও সামাজিক মাধ্যমে শোক জানিয়ে বলেন, ‘ইথিওপিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে আমি রাইলা ওডিঙ্গার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি শান্তিতে থাকুন।’