তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক+ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় এবং কানাডার তেল উৎপাদনকারী প্রদেশে দাবানলে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তেলের দাম বৃদ্ধির আরেক কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ। এ ছাড়া ইরানের পারমাণবিক আলোচনাও অনিশ্চিয়তা তৈরি করেছে।
ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের ফিউচার ১.৮৫ ডলার বা ২.৯৫ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৬৪.৬৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম ১.৭৩ ডলার বা ২.৮৫ শতাংশ বেড়ে ৬২.৫২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, সোমবার (২ জুন) পর্যন্ত কানাডার তেল উৎপাদনকারী প্রদেশ আলবার্টায় দাবানলের কারণে দেশের সামগ্রিক অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের প্রায় ৭ শতাংশ প্রভাবিত হয়েছে।
ফোর্ট ম্যাকমারের দক্ষিণে অবস্থিত অন্তত দুটি থার্মাল অয়েল স্যান্ডস প্রকল্প থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সতর্কতামূলকভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিউইয়র্কের ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠান এগেইন ক্যাপিটালের অংশীদার জন কিল্ডাফ বলেছেন, ‘আলবার্টায় দাবানল এখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।’
তেলের দামের ঊর্ধ্বমুখিতায় আরও একটি কারণ হলো মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়া। সোমবার ডলারের দাম বেশকিছু মুদ্রার বিপরীতে কমে গেছে, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হুমকিতে বাজারে মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডলারের দাম কমলে অন্য মুদ্রায় ক্রয়কারী দেশগুলোর জন্য তেল তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে যাবে।
রাইস্টাড এনার্জির বিশ্লেষক জর্জ লিওন, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ওপর বাড়তি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় তেলের দামে প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা থেকে মিশ্র বার্তা আসায় বাজার উদ্বেগে রয়েছে। সোমবার একজন ইরানি কূটনীতিক বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তবে গত মাসে রোমে শেষ (পঞ্চম) রাউন্ড আলোচনার পর কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক+ শনিবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা জুলাই মাসে দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াবে, এটি টানা তৃতীয় মাসে একই পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধি। জোটটি বাজারের অংশীদারত্ব ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের কোটার চেয়ে বেশি উৎপাদনকারী সদস্যদের ‘শাস্তি’ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তবে শুক্রবার ওপেক+ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা আরও বেশি উৎপাদন বৃদ্ধির আলোচনা করতে পারে।
তেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল বৃদ্ধি এরই মধ্যেই বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
প্রাইস ফিউচারস গ্রুপের একজন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ফিল ফ্লিন বলেন, বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন যে, তেল উৎপাদনকারী গোষ্ঠীটি আগের চেয়ে বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। আমি মনে করি তারা ভুল পথে আটকা পড়েছে।
গোল্ডম্যান শ্যাক্স বিশ্লেষকরা আশা করছেন, ওপেক+ আগস্টে প্রতিদিন ৪ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
ব্যাংকটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তেলের বাজার এখনো বেশ সংর্কীণ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রত্যাশার চেয়ে ভালো এবং গ্রীষ্মকালের চাহিদাও বাড়বে– এসব কারণে আগস্টে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কোনো বাধা আসার কথা নয়।’
মরগান স্ট্যানলি বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিমাসে ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল করে মোট ২.২ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন ফিরিয়ে আনা হবে। তাদের মতে, ‘এই সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, উৎপাদন বৃদ্ধির গতি কমছে– এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।’