ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষে উদ্ধার অভিযান চলার মধ্যেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার এক বিবৃতিতে দেশটি ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘অযৌক্তিক, জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন’ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চেষ্টার উপর ‘ধ্বংসাত্মক আঘাত’ বলে উল্লেখ করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি এসভিআর গোয়েন্দা সংস্থা, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণ, এবং আমরা এ ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা জানাই।’
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক নেতৃত্বের উপর হামলা চালিয়েছে-তাদের ভাষায়, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ।
তবে প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র-যেটি রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত-তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের এই শক্তি প্রয়োগ জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপর, যেখানে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, সেখানে এমন হামলা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে নির্বিকার থাকা চলবে না।’ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, পশ্চিমা বিশ্ব ইরানবিরোধী ‘উন্মত্ততা’ ছড়িয়ে কূটনৈতিক সমাধানের পথ রুদ্ধ করছে।
রাশিয়ার মতে, ‘পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানের প্রতি পশ্চিমাদের সন্দেহ দূর করার একমাত্র পথ কূটনীতি, কোনো সামরিক সমাধান নয়।’
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইরানকে বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা করে আসছে। এমনকি সম্প্রতি তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিয়ে তা রূপান্তরের মাধ্যমে তেহরান-ওয়াশিংটনের পারমাণবিক বিরোধ মেটানোর প্রস্তাবও দেয়।
শুক্রবারের বিবৃতিতে রাশিয়া এই প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলে, ‘এই অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে গড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আত্মসংযম দেখাতে হবে।’
পুতিনের নির্দেশে প্রস্তুত করা বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী রবিবার ওমানে পারমাণবিক ইস্যুতে পুনরায় আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে-যা একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুযোগ বলে মনে করছে মস্কো।
পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান জানুয়ারিতে এক বিশ বছরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি সই করেন, যার মাধ্যমে সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়। তবে চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ধারা নেই-যা রাশিয়ার একধরনের সতর্ক অবস্থানকেই ইঙ্গিত দেয় বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।