ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ছায়ায় ঢাকা পড়েছে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০৫:০৮ এএম
জি-৭ সম্মেল। ছবি- সংগৃহীত

রকি পর্বতমালার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পটভূমিতে শুরু হয়েছে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন। তবে কানাডার আলবার্টায় আয়োজিত এই সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর বৈঠককে ঢেকে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, বিশেষত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ পরিস্থিতি।

কানাডার সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সম্মেলনে জি-৭ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অন্যান্য অতিথি দেশ। তবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক আলোচনা এবং বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে সম্মেলনের মূল আলোচনায় উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সংকট।

বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ, গাজা ও ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে জি-৭ নেতাদের কূটনৈতিক অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

রোববার (১৫ জুন) কানাডাগামী ফ্লাইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে। আমরা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিই, তবে আমি বলব-এই উত্তেজনা কমাতে হবে। এতে অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে।’

এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তির সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক হামলা ইরানকে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসার দিকে ধাবিত করতে পারে। উভয় পক্ষ কথাবার্তা বলতে চায়, এবং সেটা হবে।’

তিনি আরও বলেন, সম্ভাব্য সমঝোতার জন্য রাশিয়ার মধ্যস্থতা একটি বাস্তব বিকল্প হতে পারে, যা উভয় পক্ষেরই গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

জি-৭ সম্মেলনের পাশাপাশি রোববার পূর্বনির্ধারিত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক বাতিল হয়ে যায়, কারণ ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের প্রতিনিধিদলের কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তেহরান।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আশা প্রকাশ করেছেন, ‘ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রশমিত হবে। তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার উপযুক্ত সময় এখনই।’

ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিজের বিশ্লেষক বেহনাম বেন তালেবলু বলেন, ‘জি-৭’র উচিত ইরানকে কঠিন বার্তা দেওয়া-তোমার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করো, নয়তো সামরিক শক্তিও হারাতে হতে পারে।’

তিনি ইরান ইন্টারন্যাশনালকে আরও জানান, ‘জি-৭ একটি যৌথ কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের কেন্দ্র হতে পারে, যা এই সহিংসতার চক্র বন্ধ করতে সহায়ক হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের সামরিক প্রচেষ্টায় অংশ নিতে পারে, যদিও কূটনৈতিক সমাধানই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ এবং সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।

জি-৭ সম্মেলনের সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখা। আর এসবই নির্ভর করছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা কতটা দ্রুত প্রশমিত হয় তার ওপর।