ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের সামনে তিনটি পথ খোলা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ১১:০০ এএম
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । ছবি - সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের পক্ষে। আন্তর্জাতিক চাপে সমর্থন থেকে সরে দাঁড়ালেও আবার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এসব হামলা ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করেই’ চালানো হয়েছে। তাহলে কোন পথে এগোবেন ট্রাম্প সেটাই এখন ভাবাচ্ছে  পুরো বিশ্বকে।

নেতানিয়াহুর চাপে নতি স্বীকার ও সংঘাত বাড়ানো

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ও সহায়তায় ইসরায়েল ‘আরও ভয়ংকর’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি বার্তা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নেতানিয়াহুর সুর মিলিয়ে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না বলেন ট্রাম্প।

তবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি করার আশা ব্যক্ত করেছেন যা আবার নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিরোধী।

তবে সে চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। একবার কূটনৈতিক তো একবার সামরিক শক্তির হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন খামেনি।

তিনি বলেছিলেন, ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা হয়তো চুক্তিতে সাহায্য করবে, অথবা সেটা পুরো চুক্তিকেই ‘বিধ্বস্ত’ করে দেবে।

তবে এই অনিশ্চয়তাপূর্ণ অবস্থান বা অস্থিরতাকে অনেক সময়ই ট্রাম্পের সমর্থকেরা তার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এটাকে তারা বলছেন ‘ম্যাড ম্যান থিওরি’ বা কূটনীতির তথাকথিত ‘পাগল তত্ত্ব’।

এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃত অনিশ্চয়তা বা অপ্রত্যাশিত আচরণ প্রতিপক্ষকে (বা ট্রাম্পের ক্ষেত্রে, এমনকি মিত্রদেরও) বাধ্য করে একটি নির্দিষ্ট পথে আসতে। এই তত্ত্বটি মূলত প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের স্নায়ুযুদ্ধকালীন কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা ও সমর্থক ইরান ইস্যুতে এই ‘পাগল তত্ত্ব’ কৌশলের পক্ষে। তাদের বিশ্বাস, এসব হুমকিই শেষ পর্যন্ত সফল হবে। কারণ তারা মনে করেন, ইরান আসলে আলোচনায় আগ্রহী না (যদিও ২০১৫ সালে ওবামার নেতৃত্বে হওয়া একটি পরমাণু চুক্তিতে ইরান স্বাক্ষর করেছিল, যেটা ট্রাম্প পরে বাতিল করে দেন)।

কূটনীতির বিপরীতে সামরিক পদক্ষেপ নিতে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পকে চাপ দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। শেষমেষ হয়তো ট্রাম্প তার আগ্রাসী হুমকিগুলোকেই বাস্তবে রূপ দিবেন। যদিও তিনি বহুবার নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় ইসরায়েল। এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কার বাস্টার বোমা। একমাত্র এই বোমা দিয়েই সম্ভব ইরানের ফরদোতে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করা ।

এদিকে যতই সংঘর্ষ বাড়ছে, ততই কংগ্রেসের রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছ থেকে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে, যারা বহুদিন ধরেই ইরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আসছেন।

ট্রাম্প হয়তো এটাও ভাবছেন, এতে ইরান দুর্বল অবস্থায় আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে।

কিন্তু সত্য হলো, ইরান ইতোমধ্যেই আলোচনার টেবিলে ছিল, কারণ তার দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ওমানে রোববার ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সেই আলোচনাও বাতিল হয়ে গেছে।

মধ্যপন্থা

ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছে ট্রাম্প।

তবে মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ও স্থলভিত্তিক মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলকে ইরানের হামলা থেকে সুরক্ষা করছে।

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কিছু উপদেষ্টা হয়তো তাকে সতর্ক করছেন যে এই মুহূর্তে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য, যা ইসরায়েলের ইরানবিরোধী হামলাকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। কারণ কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে প্রাণঘাতী হামলা করেছে।

নেতানিয়াহু এখন বলছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওপর হামলা চালালে সেটা সংঘাত বাড়াবে না বরং সংঘাতের শেষটা এখানেই।

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা কিছু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন যে তিনি এমন হামলার বিপক্ষে।

সমর্থকদের চাপ এবং পেছনে সরে আসা

ট্রাম্পের মনে যেসব বড় রাজনৈতিক বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে, তার একটি হলো তার দেশের অভ্যন্তরীণ সমর্থন।

কংগ্রেস ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করে ও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। 

কিন্তু ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বা মাগা আন্দোলনের ভেতরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে, যারা এখন এই ‘লোহার মতো শক্ত’ ইসরায়েলকে সমর্থনকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে।

গত কয়েক দিনে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো ঝুঁকি কেন নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসন শুক্রবার কড়া সমালোচনা করে লিখেছেন, প্রশাসনের দাবি যে তারা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু তা সত্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলকে নিজের মতো করে ছেড়ে দেওয়া।

তিনি বলেন, নেতানিয়াহু এবং তার ‘যুদ্ধপিপাসু সরকার’ এমনভাবে কাজ করছে, যাতে মার্কিন সেনারা বাধ্য হয়ে তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে নামে।

কার্লসন লেখেন, ‘এই যুদ্ধে জড়ানো মানে হবে, যেসব কোটি কোটি ভোটার আশা করেছিলেন একটি সরকার আসবে যারা সত্যিই আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেবে, তাদের মুখের ওপর মাঝের আঙুল দেখানো।’

ঠিক একইভাবে, ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েল/ইরান যুদ্ধের পুরোপুরি অংশ বানাতে চায়, তারা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা মাগা আদর্শের নয়।’

এমতাবস্থায় ট্রাম্প কোন পথে এগোবেন তার অপেক্ষায় আছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব।