ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির জবাবে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে লিখেছেন, ‘মর্যাদাবান হায়দারের নামে, যুদ্ধ শুরু হলো।’ এই বক্তব্যটি কেবল প্রতিক্রিয়া নয়, বরং ধর্ম, ইতিহাস ও প্রতিরোধের গভীর রাজনৈতিক ভাষ্য।
‘হায়দার’ উপাধিতে সুপরিচিত ইমাম আলী ইবনে আবু তালিব যিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা এবং শিয়া মুসলমানদের প্রথম ইমাম ছিলেন। ‘হায়দার’ অর্থ সিংহ।আলী ছিলেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা।
আয়াতুল্লাহ খামেনি ‘হায়দারের নামে যুদ্ধ’ ঘোষণার মাধ্যমে শুধু ট্রাম্পের বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া নয় একটি প্রতীকময় যুদ্ধ ঘোষণা করেন যেখানে তিনি নিজেকে ইমাম আলীর সংগ্রামের সৈনিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে। ‘জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ ছিল তার সংগ্রামের প্রধান লক্ষ্য।
ইসলামের শুরুর যুগে যেক’টি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিল; বদর, ওহুদ, খন্দক সবটিতেই তিনি ছিলেন সম্মুখযোদ্ধা এবং বিশেষত খন্দকের যুদ্ধে যেবার খন্দক লঙ্ঘন করে চির বিপজ্জনক ইহুদি যোদ্ধা আমর ইবনে আবদে ওয়াদ তাঁবুতে হানা দেয়, আলী ছিলেন একমাত্র মুসলমান যিনি তার মোকাবিলা করে বিজয়ী হন।
ওই যুদ্ধের পর নবী বলেছিলেন, ‘আজ আলীর এক ঘা কেয়ামত পর্যন্ত সব মুসলমানের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’
শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আলী ছিলেন ‘মাওলা’ যার মানে নেতা, অভিভাবক ও আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি। তাঁকে কেন্দ্র করে শিয়াবাদের প্রতিষ্ঠা, যাঁরা তাঁকে মহানবীর প্রকৃত ও ঈশ্বর নির্ধারিত উত্তরাধিকারী মনে করে। শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, আলী ছিলেন গভীর দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ ও ন্যায়বিচারক। তাঁর বক্তব্য, ‘একটি সমাজ কুফর দিয়ে টিকে থাকতে পারে, কিন্তু জুলুম দিয়ে নয়’ আজও ইরানে রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি।
বিশ্বের মুসলিমদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আহ্বান জানিয়েছেন খামেনি। লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তিনি। খামেনি বলেন, ‘আপনারা লেবাননের পাশে দাঁড়ান। দুষ্ট শাসনের (ইসরায়েল) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গর্বিত হিজবুল্লাহ আমাদের বন্ধু।’
আয়াতুল্লাহ খামেনির এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বার্তা, যা ইসলামের ইতিহাস ও শিয়ার প্রতিরোধের ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।