ইসরায়েলে সাম্প্রতিক হামলার পর চীন বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। একই সময়ে দেশটি থেকে ইরানের উদ্দেশে রহস্যময় একের পর এক বিমান পাঠানো হয়েছে, যা ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও জল্পনাকল্পনা।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের হামলার একদিন পরই চীন থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ কার্গো বিমান ইরানের উদ্দেশে রওনা দেয়।
এরপর আরও দুটি বিমান চীনের উপকূলীয় শহর এবং সাংহাই থেকে ইরানের দিকে যাত্রা করে। ফলে তিন দিনের ব্যবধানে মোট তিনটি বোয়িং ৭৪৭ কার্গো বিমান ইরানে পৌঁছেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি বিমান উত্তর চীন হয়ে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান পার করে ইরানের দিকে যায়। তবে ইরানের সীমান্তে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে এসব বিমান রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্লাইট পরিকল্পনায় বিমানগুলোর গন্তব্য হিসেবে ইউরোপের লুক্সেমবার্গ দেখানো হলেও কোনো বিমানই ইউরোপের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি।
এমন পরিস্থিতিতে চলমান যুদ্ধে চীন থেকে ইরানে এই কার্গো বিমান পাঠানো নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিমানগুলোতে কী বহন করা হয়েছে তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এভিয়েশন বিশ্লেষকরা মনে করেন, বোয়িং ৭৪৭ সাধারণত সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনে কিংবা সরকারিভাবে বিশেষ চুক্তিভিত্তিক পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
চীনের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার কূটনীতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. আন্দ্রেয়া ঘিসেল্লি মনে করেন, ইরানকে চীনের সহায়তা দেওয়ার প্রত্যাশা অনেকের মধ্যেই রয়েছে। আর এসব কার্গো পরিবহন সেই সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করে।
তার মতে, ‘বর্তমান শাসনব্যবস্থার (ইরানে) পতন একটি উল্লেখযোগ্য আঘাত হবে (চীনের জন্য) এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। যা শেষ পর্যন্ত চীনের অর্থনৈতিক ও জ্বালানি স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করবে।’
তবে ইরান-ইসরাইল সংঘাতের এই মুহূর্তে, বেইজিং সম্ভবত সতর্কতার সাথেই এগোবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা (INSS)-এর গবেষক তুভিয়া গেরিং বলেন, চীনা সামরিক সরঞ্জাম ইতোমধ্যে ইরানে পৌঁছেছে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, তবে এই সম্ভাবনাটিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
এদিকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনাকারী লুক্সেমবার্গভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কার্গোলাক্স দাবি করেছে, তাদের কোনো ফ্লাইট ইরানের আকাশপথ ব্যবহার করেনি। তবে, বিমানগুলোর কার্গো নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।