ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব হারাচ্ছেন পুতিন

নিউজউইক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৫:৩৫ এএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানবিরোধী সামরিক অভিযানের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে একজন শান্তিদূত হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত রাশিয়ার জন্য হতে পারে ‘অপারেশন ফলিং ইনফ্লুয়েন্স’, অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে রুশ প্রভাবের পতনের আরেক অধ্যায়।

ছয় মাস আগে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা হারান। এখন ইরানের মতো আরেক ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রকে হারানোর আশঙ্কায় পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু বোরিন বলেন, ‘আসাদকে হারানো যেন ছিল ক্ষুধার্তের মতো, কিন্তু ইরানকে হারানো হবে মূল কোর্স। ইরানি সরকার যদি পতন করে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব হ্রাস পাওয়া অনিবার্য।’

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলো এই উত্তেজনার মধ্যে তেলমূল্য বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে দেখালেও, রুশ দৈনিক কোমেরসান্ট-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই অভিযান রাশিয়ার জন্য গুরুতর ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের নির্বাহী পরিচালক গ্রেগ রোমান বলেন, ‘সিরিয়া, ইরাক এমনকি ইরানেও রাশিয়ার প্রভাব হারাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যগত শক্তিগুলোর মধ্যে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের যুগ শেষ হয়ে গেছে।’

সোভিয়েত আমলে রাশিয়া আরব দেশগুলোর—যেমন মিশর, সিরিয়া ও ইরাক পাশে থাকত, আর যুক্তরাষ্ট্র ছিল তুরস্ক, ইসরায়েলসহ অন্যান্য দেশের মিত্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করে, শুধু ইরান ও সিরিয়া ব্যতিক্রম।

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সিরিয়ায় অবস্থান নেয়। তারা তখন তর্তুসে নৌঘাঁটি এবং খমেইমিমে বিমানঘাঁটি তৈরি করে। কিন্তু আসাদ বিরোধীদের হাতে ক্ষমতা হারিয়ে মস্কোয় আশ্রয় নেওয়ার পর রাশিয়ার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।

বোরিন বলেন, এই সংঘাত দ্বিপাক্ষিক ঠান্ডা যুদ্ধের সময় হলে তার প্রভাব সীমিত থাকত। কিন্তু এখন এটি বহু শক্তির সংঘাত—যেখানে রাশিয়া পিছু হটছে, আর ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ফলে রাশিয়ার অবস্থান আরও দুর্বল হচ্ছে।

ইরানি ড্রোন উৎপাদনে সহায়তা করে রাশিয়া নিজেরাও তা তৈরি করছে। জানুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি’তে সামরিক সহযোগিতা থাকলেও কোনো যৌথ প্রতিরক্ষা ধারা নেই। বিশ্লেষক গ্রেগ রোমান বলেন, এটা স্পষ্ট করে দেয় যে রাশিয়া কখনোই ইরানের জন্য সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না।

এদিকে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে ‘জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের ওপর বিনা উসকানিতে হামলা’ বলে সমালোচনা করেছে, সেটাই আবার ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পও পুতিনের শান্তির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আগে নিজ দেশে যুদ্ধ থামান।’

ইসরায়েলের আকস্মিক হামলায় রাশিয়া বিস্মিত হয়েছে। এমনকি ইরানের নির্বাসিত রাজপুত্র রেজা পাহলভিও আহ্বান জানিয়েছেন দেশটিতে বিপ্লব ঘটানোর, দাবি করেছেন যে, আয়াতুল্লাহ খামেনি ‘ভীত ইঁদুরের’ মতো লুকিয়ে আছেন।

যদি ইরানি সরকার টিকে থাকে, তবুও রাশিয়া জোটে পরাজিত পক্ষের সঙ্গে থাকার মতো বিপাকে পড়বে।

রোমান বলেন, রাশিয়া এখনও মিশর, লিবিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় অস্ত্র বিক্রি করে এবং সামরিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু কৌশলগত ও বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্রীয় জোটের ক্ষেত্রে রাশিয়ার অধ্যায় শেষের দিকে।