ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

১২ দিনের যুদ্ধে ১২ বিলিয়ন ডলার খোয়ালো ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ১১:২৭ পিএম
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন। ছবি- সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার) ছুঁয়েছে। এই অর্থের বেশিরভাগই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ভবন মেরামত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যবহার করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ

ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় ও কর বিভাগ জানিয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রমাণ করে যে দুই সপ্তাহের টানা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় কতটা চাপ ফেলেছে।

ইসরায়েলি কর বিভাগের প্রধান শাই আহারোনোভিচ বলেন, ‘এই যুদ্ধ ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে কখনো এত ক্ষতি হয়নি।’

এই ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণ বা অস্ত্র প্রতিস্থাপনের খরচ ধরা হয়নি। তাই বাস্তব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ধারণা দিয়েছেন, পুরো যুদ্ধের খরচ ১২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, প্রকৃত খরচ হয়তো এর অর্ধেক হবে। তবুও এটা এমন এক অর্থনীতির জন্য বিশাল চাপ, যা ইতোমধ্যেই ২০ মাসের সংঘাতে বিপর্যস্ত (গাজায় হামাসের সঙ্গে)।

যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতির পূর্বাভাসিত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।

ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। তারপর থেকে উভয় পক্ষ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় করে। যুদ্ধবিরতি আসে ২৫ জুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের ২৮ জন নিহত ও এক হাজার ৩০০ জন আহত হয়েছেন। ইরান দাবি করেছে, তাদের ৬২৭ জন নিহত হয়েছে।

বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল জানায়, প্রতিটি হামলায় কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বাধা এড়িয়ে যায়, প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এই যুদ্ধে বহু ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলের ওপর আঘাত হেনেছে, যেখানে তেল আবিবসহ বহু ঘনবসতিপূর্ণ শহর রয়েছে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হয়েছে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্রে ছিল ৫০০ কেজি বিস্ফোরক, যা ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে।

এর পাশাপাশি ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট, হাইফার তেল শোধনাগার ও দক্ষিণের একটি সরকারি হাসপাতালও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

সরকারের প্রাথমিক হিসাবে শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই প্রায় ৫ বিলিয়ন শেকেল ক্ষতিপূরণ লাগবে। এটি ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামাস আক্রমণের ক্ষতিপূরণের তুলনায় দ্বিগুণ। তখন হামাস ও হিজবুল্লাহর হামলা তুলনামূলকভাবে ছোট গ্রামীণ এলাকায় ছিল। কিন্তু ইরান শহর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হ্রাস করাই ছিল এই যুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য, পাশাপাশি ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ধ্বংস করাও। ইসরায়েলি গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের আগে ইরানের কাছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, যার প্রায় অর্ধেক এখনও আছে।

এই যুদ্ধ শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।