গাজায় চলমান ‘ইসরায়েলি’ অবরোধ এবং মানবিক সহায়তায় বাধা দেওয়ার কারণে শিশুদের মাঝে অপুষ্টি ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, পুরো অঞ্চলে প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ১ জন অপুষ্টিতে ভুগছে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বুধবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিকে ‘ইচ্ছাকৃত ও মানবসৃষ্ট’ হিসেবে তুলে ধরে ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানান, ‘ইসরায়েলের’ অবরোধে গাজায় পুষ্টিসামগ্রীর চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মানবিক সহায়তা ব্যাপকভাবে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।
লাজারিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি বিলম্ব হলে তা আরও মৃত্যুর কারণ হবে। এরইমধ্যে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৭০ জন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতর্কিত ত্রাণ ব্যবস্থার অধীনে।
ইউএনআরডব্লিউএ-এর যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট টুমা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ওষুধ, পুষ্টিসামগ্রী, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এর মধ্যেই গাজায় অপুষ্টির হার বাড়ছে, বিশেষ করে গত ২ মার্চ অবরোধ আরও জোরদারের পর থেকে। আমাদের এক স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, এর আগে তিনি এসব অপুষ্টির ঘটনা শুধু পাঠ্যবই আর প্রামাণ্যচিত্রেই দেখেছেন।’
টুমা জানান, গাজায় বর্তমানে ছয় হাজারের বেশি খাদ্য, ওষুধ ও স্বাস্থ্যবিধি সরবরাহবাহী ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে আটকে আছে।
ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ২০২৪-এর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ক্লিনিকগুলোতে তারা পাঁচ বছরের নিচের ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিশুকে পরীক্ষা করেছে, যেখানে যুদ্ধের আগে গাজায় এমন মারাত্মক অপুষ্টির হার দেখা যায়নি।
এদিকে, গাজায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি-অস্ট্রেলিয়ান-নিউজিল্যান্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সেবায় নিয়োজিত নার্স অ্যান্ডি ক্লার্ক ভন বুধবার আলজাজিরাকে জানান, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা কর্মীদের কাছ থেকে শিশুদের দুধ (বেবি ফর্মুলা) জব্দ করেছে। তিনি বলেন, ‘এখানে অপুষ্টির কারণে শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। অনেক মা এতটাই অপুষ্টিতে ভুগছেন যে তারা শিশুদের দুধ পান করাতে পারছেন না। ফলে শিশুদের বাঁচিয়ে রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। মায়েরা বাধ্য হয়ে দূষিত পানি দিয়ে ডাল বা শিম মিশিয়ে কিছু তৈরি করছেন, যাতে অন্তত সামান্য পুষ্টি দিয়ে সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখা যায়।’
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ‘শুধু গত মাসেই গাজায় ৫ হাজার ৮ শতাধিক শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।’