২০৩০ সালের মধ্যে ১০ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর উচ্ছাভিলাষী উদ্যোগ নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে বৃহৎ পরিসরে এই বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে কার্বন সংরক্ষণ বৃদ্ধি, সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল তৈরি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছর এই উদ্যোগের আওতায় ইতোমধ্যেই ৩ কোটিরও বেশি ম্যানগ্রোভ গাছ রোপণ করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে রোপণ এবং টিস্যু কালচার বংশবিস্তারসহ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজটি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় ধারাবাহিক উদ্যোগের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্বের অবস্থান তৈরি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান ব্যবহারের একটি মডেল হিসেবেও দেশটি পরিচিতি পাচ্ছে।
এই অর্জনগুলো প্রতি বছর ২৬ জুলাই পালিত আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ দিবসের মূল বার্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দিবসটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল ক্ষয় ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা রোধে ম্যানগ্রোভের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. আমনা বিনতে আবদুল্লাহ আল দাহাক বলেছেন, ‘আমাদের উপকূলের ম্যানগ্রোভ গাছ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে।’

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ম্যানগ্রোভের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর অসাধারণ কার্বন ধারণ ক্ষমতা, যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টের তুলনায় চারগুণ বেশি। একই সঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্য ও আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তুতন্ত্র তৈরি করে।
ড. আমনা ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে সরকারি ও সম্প্রদায়ভিত্তিক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্ব সরাসরি এই গাছের অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত।’
স্থানীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত বৈশ্বিক পর্যায়েও ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশটি ম্যানগ্রোভ অ্যালায়েন্স ফর ক্লাইমেট (এমএসি) গঠন করেছে, যেখানে সরকার ও এনজিওসহ ৪৫টি সদস্য সংস্থা একত্রিত হয়েছে। এই জোটের লক্ষ্য ম্যানগ্রোভ সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও নীতি সহায়তা জোরদার করা।
এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার বালিতে স্থাপিত মোহাম্মদ বিন জায়েদ জোকো উইদোডো আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ গবেষণা কেন্দ্র উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। আগামী অক্টোবর মাসে আবুধাবিতে আইইউসিএন ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন কংগ্রেস আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইউএই আবারও ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবে, যেখানে এই বিষয়টি হবে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
তথ্যসূত্র: গালফ নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :