অবশেষে গাজা উপত্যকায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘ইসরায়েলি’ বাহিনী। জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উপত্যকাটিতে বিমানযোগে ২৫ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে। ত্রাণের বাক্স পড়ে অন্তত ১০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। খবর রয়টার্সের।
রোববার (২৭ জুলাই) ‘ইসরায়েল’ তাদের বিমান থেকে সাতটি ত্রাণ প্যাকেট ফেলেছে। প্যাকেটগুলোতে ছিল আটা, চিনি ও টিনজাত খাদ্য। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।
এদিকে দোহায় ‘ইসরায়েল’ ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত না পাওয়ায় আলোচনা ভেঙে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ‘ইসরায়েল’ ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে, যদিও তেল আবিব তা অস্বীকার করছে।
‘ইসরায়েল’ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার আল-মাওয়াসি, মধ্য দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটির উত্তর অংশে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পাশাপাশি সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে খাদ্য ও ওষুধবাহী কনভয়ের জন্য নিরাপদ রুট চালু থাকবে।
জর্ডানের একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত রোববার বিমানযোগে গাজায় ২৫ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে। এটি কয়েক মাসের মধ্যে তাদের প্রথম যৌথ বিমান ত্রাণ কার্যক্রম। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা স্থলপথে সরবরাহের বিকল্প নয়।
গাজা সিটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রাণের বাক্স পড়ে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, গাজার নির্ধারিত বিরতির সময় ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে। তিনি জানান, ‘আমাদের দলগুলো মাঠে... যতটা সম্ভব ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।’
রোববার গাজার আল-আওদা ও আল-আকসা হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রাণ ট্রাকের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ‘ইসরায়েলি’ গুলিতে অন্তত ১৭ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে এ পর্যন্ত ১৩৩ জন গাজাবাসী মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৮৭ জন শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায়ই ছয়টি নতুন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শনিবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে পাঁচ মাস বয়সি জয়নব আবু হালিব অপুষ্টির কারণে মারা যায়।
এদিকে মিশরীয় রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, রোববার কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ গাজায় ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যসহ ১০০টিরও বেশি ট্রাক পাঠানো হয়েছে।
সহায়তাকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষুধা দেখা দিয়েছে। এই মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করেছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডাসহ ২৫টি দেশের একটি জোট ‘অল্পস্বল্প সাহায্য’ নীতির নিন্দা জানিয়ে বলেছে, প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখা অগ্রহণযোগ্য।
‘ইসরায়েল’ দাবি করেছে, তারা সাহায্যের অনুমতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে সহায়তা যাতে জঙ্গিদের হাতে না যায় সেজন্য নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তাদের বক্তব্য, যুদ্ধ চলাকালে গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য ঢুকেছে এবং জনগণের দুর্দশার জন্য হামাস দায়ী।
এদিকে শুক্রবার ‘ইসরায়েল’ ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয় বলে স্পষ্ট হওয়ায় আলোচনায় সমঝোতা সম্ভব হচ্ছে না।