মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ব্যান্ড ‘ওউন্ড’-এর ভোকালিস্ট, বেজিস্ট ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এ কে রাতুল। উত্তরার একটি জিমে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও পরে লুবানা হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতুল প্রয়াত চিত্রনায়ক জসিমের ছেলে।
তার মৃত্যুতে ব্যান্ডসংগীত অঙ্গনের তারকারা যেন বাকরুদ্ধ। কেউ এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না, কেউ বা আবেগে ভেসে গেছেন স্মৃতির স্রোতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক উঠে এসেছে শোকবার্তা, ভালোবাসার চিহ্ন আর হারিয়ে যাওয়া এক অনন্য শিল্পীর প্রতি অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা।
থ্র্যাশ মেটাল ব্যান্ড পাওয়ারসার্জের গিটারিস্ট সাইমুম হাসান লেখেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না, এ কে রাতুল আর আমাদের মধ্যে নেই। এমন একটা রত্ন মানুষ… ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
পাওয়ারসার্জ ব্যান্ড জানায়, ‘আজ আমরা হারালাম এক রত্নকে। আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত। ওন্ড ব্যান্ডের বেজিস্ট ও ভোকাল এ কে রাতুল আজ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।’
দৃক ব্যান্ডের ভোকালিস্ট জামান সাইফ বলেন, ‘ওন্ড-এর এ কে রাতুল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন—এই খবরটা শুনে আমরা হতবাক। দেশের রক কমিউনিটির জন্য এটা বিরাট এক ক্ষতি।’
কার্নেশন ব্যান্ড জানায়, ‘হৃদয়বিদারক এই ক্ষতির খবরে আমরা শোকাহত। রাতুল ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাধর একজন অডিও ইঞ্জিনিয়ার ও সংগীতপ্রেমী মানুষ। তার মতো দয়ালু ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষ পাওয়া কঠিন।’
সংগীত পরিচালক ইশা খান দুরে বলেন, ‘আহা! এত অল্প বয়সে চলে গেলে ভাই! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, এ কে রাতুল। মহান আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করুন। আমিন।’
সাবেক আরজে ও সংগীত পরিচালক সামির ওবায়েদ লিখেছেন, ‘শান্ত মনের একজন মানুষ ছিলেন রাতুল। শুধু কাজ না, জীবনের অনেক গভীর কথা নিয়েও আলোচনা করতাম। প্রতিভা ছিল প্রচণ্ড, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল তার হৃদয়।’
ওয়ারফেজ ব্যান্ড জানায়, ‘নতুন প্রজন্মের এক বহুমাত্রিক প্রতিভাবান ছিলেন রাতুল। গান, বাজনা, প্রোডাকশন সব জায়গাতেই তার ছাপ ছিল স্পষ্ট। বাংলাদেশের সংগীতজগৎ আজ সত্যিই এক রত্ন হারাল।’
চিরকুটের সাবেক গিটারিস্ট ও স্বনামধন্য সুরকার ইমন চৌধুরী লেখেন, ‘আমরা সত্যিই শোকাহত… বিশ্রামে থাকো ভাই, এ কে রাতুল।’
শাহরিয়ার সিয়াম লেখেন, ‘ওন্ড হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় হাইপড ছিল না, কিন্তু যারা লাইভ কনসার্টে তাদের দেখেছে, তারা জানে ওরা কেমন আগুন ঝরাত।’
চিরকুট ব্যান্ডের তরফ থেকে জানানো হয়, ‘প্রতিভাবান প্রোডিউসার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং দুর্দান্ত মিউজিশিয়ান ছিলেন রাতুল ভাই। এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
ওয়ারফেজের ড্রামার শেখ মোনিরুল আলম টিপু লেখেন, ‘আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এ কে রাতুলের মৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক। মহান আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তি দিন।’
ব্যান্ড নাইন জানায়, ‘ওন্ড-এর ভোকাল ও বেজিস্ট ছিলেন তিনি। আমাদের দেশের অন্যতম প্রতিভাবান অডিও ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন রাতুল। খুব কম বয়সেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।’
ড্যাডস ইন দ্য পার্ক ব্যান্ডের বার্তা, ‘রাতুল শুধু প্রোডিউসার ছিলেন না, তিনি আমাদের মেন্টর ছিলেন, ভাই ছিলেন। আমাদের যাত্রায় তার অবদান অমূল্য।’
ব্যান্ড শূন্য জানায়, ‘রাতুল আমাদের অনেক গানের প্রোডাকশন করেছেন। বন্ধু ছিলেন, মনের মানুষ ছিলেন। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না।’
নেমেসিস ব্যান্ডের গায়ক জোহাদ রেজা চৌধুরী লেখেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না ভাই, মাত্র দু’সপ্তাহ আগে দেখা হয়েছিল। তুমি ছিলে এক অমূল্য রত্ন।’
নেমেসিস ব্যান্ড জানায়, ‘আমরা এক সোনালি মানুষকে হারালাম, এমন একজন যিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিলেন আমাদের ভাই ও বন্ধু। আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’
আর্টসেল পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ওর স্টুডিওতে আমাদের গানের কাজ করা, বিভিন্ন কনসার্টে দেখা হওয়া-সব স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে অমলিন থাকবে। ওপারে ভালো থেকো রাতুল, সুরে, সঙ্গীতে।’
কণ্ঠশিল্পী আলিফ আলাউদ্দিন লেখেন, ‘হতভম্ব ও হৃদয়বিদারক অনুভব করছি। রাতুল ছিলেন দেশের অন্যতম সেরা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং ওন্ড ব্যান্ডের শক্তিশালী কণ্ঠ। আমরা সংগীতজগৎ থেকে এক উজ্জ্বল আলোকে হারালাম, যা খুব দ্রুত নিভে গেল। ভালো থেকো ওপারে ভাই, আমরা তোমাকে খুব মিস করব।’
মেকানিক্স ব্যান্ড জানায়, ‘জীবন আসলেই অপ্রত্যাশিত আর ক্ষণস্থায়ী। ভাবতেও পারিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে। অনেক কিছু দেবার ছিল ওর। একসাথে বহু কাজ করেছি, অনেক স্মৃতি আছে। দেশের অন্যতম সেরা বেজিস্ট, ভোকালিস্ট, প্রোডিউসার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের এমন মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ।’
শিরোনামহীন ব্যান্ড জানায়, ‘তার জানাজা আজ বাদ মাগরিব উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বড় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। আল্লাহ তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করুন।’
ব্ল্যাক ব্যান্ডের ভাষায়, ‘তার প্রতিভা, সৃজনশীলতা ও সংগীতের প্রতি ভালোবাসা যারাই তার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে। সংগীতজগতে ও আমাদের হৃদয়ে তিনি অপূরণীয় শূন্যতা রেখে গেলেন।’
অর্থহীন ব্যান্ড থেকে জানানো হয়, ‘আমাদের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এ কে রাতুল আজ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। রাতুল ব্রো, সবাইকে কাঁদিয়ে দিলে। যেখানেই থাকো ভালো থেকো।’
এ কে রাতুলের স্মৃতি সহজে ভুলবার নয়। তার সুর, তার স্পর্শ, তার প্রোডাকশন-সবকিছু গেঁথে থাকবে সহশিল্পীদের হৃদয়ে, শ্রোতার মেমোরিতে, দেশের সংগীত ইতিহাসে।