টানা চার দিন ধরে চলমান সীমান্ত সংঘাতের অবসান ঘটাতে আগামীকাল সোমবার মালয়েশিয়ায় আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
শনিবার (২৬ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের নেতাদের ফোন করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পর এই সিদ্ধান্ত আসল। খবর বিবিসি।
থাইল্যান্ড জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইয়ের নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দল আলোচনায় যোগ দেবে। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুম মানেতও আলোচনায় অংশ নেবেন।
২৪ জুলাই সীমান্তে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে অন্তত ৩৩ জন সৈন্য ও বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, উভয় দেশ দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে। কম্বোডিয়া আগেই নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। দেশটির সেনাবাহিনী থাই আর্টিলারি ও বিমান হামলার মুখে জমি ও সরঞ্জাম হারাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী মানেত বলেছেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত। ট্রাম্পের মধ্যস্থতা বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা করবে।’
থাইল্যান্ড বলেছে, তারা নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে রাজি, তবে আগে সংলাপের মাধ্যমে কম্বোডিয়ার আন্তরিকতা দেখতে চায়। উভয় দেশই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতা, বাণিজ্য আলোচনার ইঙ্গিত
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, দুই দেশের সাথে বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। তবে তার বক্তব্যে স্পষ্ট, ‘লড়াই বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা করা উপযুক্ত নয়’।
মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই হস্তক্ষেপ আসে। ১ আগস্ট থেকে থাইল্যান্ড বা কম্বোডিয়া থেকে পণ্য পরিবহণকারী মার্কিন ব্যবসাগুলোকে ৩৬ শতাংশ কর দিতে হবে, যদি তার আগে কোনো সমঝোতা না হয়।
ট্রাম্প কীভাবে আলোচনায় যুক্ত হলেন তা স্পষ্ট নয়। কারণ মাত্র একদিন আগে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পোংসা বলেছিলেন, ‘আমাদের এখনও তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই।’ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আগে আলোচনার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
শনিবার কম্বোডিয়া ইতোমধ্যেই থাইল্যান্ডের কাছে ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতি ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিল। পরে ট্রাম্প জানান, তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ও থাই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথামের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যখন শান্তি ফিরবে তখন আমি উভয় দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য অপেক্ষা করছি!’
এই সংঘর্ষে উভয় দেশই একে অপরকে প্রথমে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছে। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, সীমান্তের কাছে থাই সেনাদের ওপর নজরদারি চালাতে কম্বোডিয়ার ড্রোন মোতায়েনের পর লড়াই শুরু হয়। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই সৈন্যরা খেমার-হিন্দু মন্দিরে অগ্রসর হয়ে পূর্বের চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
উল্লেখ্য, ফরাসি দখলদারিত্বের পর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই দেশের এই বিরোধ শত বছরেরও বেশি পুরোনো।