ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ফিলিস্তিনের মানুষের সঙ্গে ২৬২ কুমির হত্যা করল ‘ইসরায়েল’

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০৮:৫৬ পিএম
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি’ পেটজায়েল বসতিস্থলের কাছে জর্ডান উপত্যকার খামারে কয়েক ডজন কুমির। ছবি- এএফপি

‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনী দখলকৃত পশ্চিম তীরের পেটজায়েলের কাছে একটি খামারে রাখা ২৬২টি কুমির মেরে ফেলেছে। পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ইসরায়েলি’ সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, অবহেলার কারণে নীল নদের কুমিরগুলো জনসাধারণের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছিল।

২০১৩ সাল থেকে নীল নদের কুমির সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত।

খামারের মালিক ড্যানি বিটান কান ১১-কে বলেন, “সেনাবাহিনী এক ধরনের ‘হত্যাকাণ্ডের উপত্যকা’ তৈরি করেছে। তারা শুধু কুমিরগুলোকে হত্যা করেছে।”

জর্ডান উপত্যকায় এই খামারটি ১৯৯০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় এটি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

গত সপ্তাহে সৈন্যরা সরীসৃপগুলো হত্যা করতে গেলে ঘটনাস্থলে অন্যান্য কুমিরগুলো মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, পশুচিকিৎসকদের জরুরি পরামর্শ অনুযায়ী খামারের নীল নদের কুমিরগুলো পরিত্যক্ত ও খারাপ অবস্থানে রাখা হয়েছিল, যা পশু নির্যাতনের কারণ হয়েছে। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে তারা নরমাংসভোজী হয়ে উঠেছিল।

একটি নিরাপত্তা সূত্র ‘ইসরায়েলি’ সংবাদ সাইট ওয়াইনেটকে বলেছে, খামারের মালিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে অস্বীকার করায় খামারটি ‘বসতির জন্য বড় ঝুঁকি’ তৈরি করেছিল।

খামারের মালিক ড্যানি বিটান বলেন, খামারে প্রায় ৮০০টি কুমির ছিল।

তিনি হারেৎজকে বলেন, জেরিকোর কাছাকাছি পেটজায়েলের খামারে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কর্মীরা এসে কুমিরদের বাস করা হ্রদের জল নিষ্কাশন করেন, শত শত কুমির গুলি করে ট্রাকে তুলে নিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, ‘সিভিল প্রশাসন আমাকে সমস্যার সমাধানে সাহায্য করেনি।’

বিটান বলেন, ‘মরক্কোর একটি কোম্পানির সঙ্গে আমার চুক্তি ছিল, তারা কুমিরগুলোকে দেশের একটি পর্যটন পার্কে স্থানান্তর করবে, কিন্তু চলমান যুদ্ধে সেটা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি আরেকটি দেশের সঙ্গেও চুক্তি করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু বেসামরিক প্রশাসন ব্যক্তিগত জায়গায় প্রবেশ করে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

খামারটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং কুমিরের চামড়া বিদেশে উৎপাদন ও বিক্রির জন্য ব্যবহৃত হতো। চ্যানেল ১২ নিউজ জানায়, ২০০০ সালের শুরু পর্যন্ত খামারে প্রায় তিন হাজার কুমির আমদানি করা হতো।

একটি নিরাপত্তা সূত্র চ্যানেল ১২-কে বলেছে, নীল নদের কুমির সংরক্ষিত প্রাণী না হওয়ার আগে বিতান কুমিরগুলো হত্যা করতেন। আইন পরিবর্তনের পর তার দখলে শত শত কুমির ছিল।

সূত্র জানায়, ‘২০১৩ সাল পর্যন্ত বিতান কুমির বিক্রি করে টাকা উপার্জন করতেন। যখন বুঝলেন আর লাভ হবে না, তখন খামারের যত্ন নেওয়া বন্ধ করে দেন।’

কান ১১-এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খামারের চারপাশে কুমিরের মরদেহ ও গুলির খোসা ছড়িয়ে রয়েছে।

খামারের ব্যবস্থাপক বাসেম সালাহ কান ১১-কে বলেছেন, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ‘ইসরায়েলি’ কর্তৃপক্ষ সকালে খামারে ঢুকে তার ফোন কেড়ে নেয়, যাতে তিনি মালিককে সতর্ক করতে না পারেন।

‘ইসরায়েলি’ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা ‘লেট দ্য অ্যানিমালস লিভ’ কুমির হত্যার সামরিক সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে।

তারা বলেছে, ‘এটি নৈতিকতার পরিপন্থী, অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রাণী হত্যা। এটি প্রাণী সুরক্ষায় ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং প্রাণী সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করেছে। কে এই আদেশ দিয়েছেন এবং অনুমোদন দিয়েছেন তা দ্রুত তদন্ত করা উচিত।’

সূত্র: মিডল ইস্ট আই