অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে তেল আবিবকে চাপ দিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। এ সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের প্রস্তাবে সম্মতি পুনর্ব্যক্ত করে সংগঠনটি। বিপরীতে গাজাজুড়ে হামলা তীব্র করেছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে আইডিএফের অমানবিক বোমাবর্ষণে এক দিনে আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলের ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ শিকার হয়েছে পুরো এক পরিবার। আশ্রয়কেন্দ্র ও তাঁবুতে থাকা পরিবারটির ১০ সদস্যকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। নিহতের ভাই সাবরিন আল-মাবহুহ আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমার ভাইকে তার ঘরেই মেরে ফেলেছে। তার স্ত্রী-সন্তানসহ সবাইকে মুছে দিয়েছে। কেউ বেঁচে নেই।’
এদিকে শেখ রাদওয়ান এলাকায় স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জাকিয়া সামি নামে সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘শেখ রাদওয়ান জ্বলছে। যদি গাজা সিটির দখল থামানো না যায়, আমরা মরে যাব। যারা শুধু দেখছে, কিছু করছে না, তাদের আমরা ক্ষমা করব না।’
গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গাজা সিটিতে গত তিন সপ্তাহে অন্তত ১০০ রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক ও মহল্লা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা সিটিতেই মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি।
আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি ‘প্রলয়ংকরী’ রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এর কোনো শেষ নেই... পুরো মহল্লা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একের পর এক। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, সব হারাচ্ছে। এটা যেন এক দুঃস্বপ্ন।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অবরোধের কারণে খাদ্য ও সহায়তা প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ আরও ছয়জন অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে। অবরোধ চলাকালে এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত কারণে ৩৬৭ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, এর মধ্যে ১৩১ শিশু।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের গাজা সিটি দখল অভিযান প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। কেবল ১৪ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে জোরপূর্বক নতুন করে ৮২ হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০ হাজারকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরতে বাধ্য করা হয়েছে।
ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ পাঁচ বছরের নিচের ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। সর্বমোট ৩ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু ভয়াবহ ক্ষুধার মুখে রয়েছে। তারা বলছে, ‘দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, শিশুদের এখনই জরুরি মানবিক সহায়তা, বিশেষ পুষ্টি পণ্য প্রয়োজন।’
খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিসি গত আগস্টেই নিশ্চিত করেছে, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত দক্ষিণে ছড়াচ্ছে। সহায়তাকর্মীদের মতে, ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধে প্রতিদিন টিকে থাকাই হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিদের জন্য সংগ্রাম।