ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে তুমুল বিক্ষোভ, পোড়ানো হলো গাড়ি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
‘ইসরায়েল’-এর প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জেরুজালেমের বাসভবনের সামনে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জেরুজালেমের বাসভবনের সামনে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুড়ে ছাই হয়ে যায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তার গাড়ি। বুধবার সকালে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সমালোচনা ওঠে ‘ইসরায়েল’-এর রাজনৈতিক অঙ্গনে। নেতানিয়াহু নিজেই বিক্ষোভকারীদের আচরণকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ‘ইসরায়েল’র এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার ‘ইসরায়েল’জুড়ে পালিত হচ্ছিল ‘ডে অব ডিসরাপশন’ বা ‘অবরোধ দিবস’। গাজায় হামাসের হাতে আটক ৪৮ জন ‘ইসরায়েলি’ জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যেই বিক্ষোভ আহ্বান করা হয়েছিল। তবে আয়োজক সংগঠনগুলো অগ্নিসংযোগের দায় অস্বীকার করে।

অগ্নিসংযোগে আতঙ্ক

পুলিশ বলছে, সকালে মুখোশধারী বিক্ষোভকারীরা রেহাভিয়া ও গিভাত রাম এলাকায় আবর্জনার ডাস্টবিন ও টায়ারে আগুন ধরায়। এতে কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঘরবাড়ি থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

যে গাড়িটি পুড়ে যায় সেটি ছিল মেজর (রিজার্ভ) ইয়োয়াভ বার শাই এবং তার স্ত্রী তামার বার শাইয়ের। ইয়োয়াভ ২৫০ দিনেরও বেশি রিজার্ভ ডিউটি শেষ করেছেন এবং শিগগিরই গাজায় নতুন মিশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার।

তামার বার শাই চ্যানেল ১২ নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গাড়ি নেই। আমরা জিম্মি পরিবারগুলোর পাশে আছি, কিন্তু এ ধরনের কাজ ঘৃণা ছড়ায়।’

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিক্ষোভ বৈধ। কিন্তু এরা ফ্যাসিস্টদের মতো আচরণ করছে—সম্পত্তি নষ্ট করছে, সড়ক অবরোধ করছে, নির্বাচিত কর্মকর্তাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, তাকে ও তার পরিবারের ওপর প্রতিদিন হত্যার হুমকি আসছে।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি জিম্মিদের মুক্তি বিষয়ে চুক্তি না করার কারণে সরকারের সমালোচনাও করেছে তারা। বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, ‘আমি গাড়ি পোড়ানোর নিন্দা জানাই, তবে তার চেয়ে বেশি নিন্দা জানাই সেই সরকারকে, যারা গাজায় জিম্মিদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।’

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার

পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৬০ ও ৮০ বছর বয়সি দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের আইনজীবীরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা বার শাই পরিবারের জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় দুই লাখ শেকেল (একটি নতুন গাড়ি, শিশুদের আসন ও খেলনা কেনার জন্য যথেষ্ট) সংগ্রহ হয়।

অবরোধ দিবসজুড়ে বিক্ষোভ

সকালে নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি মন্ত্রী রন ডারমারের বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ হয়। অন্যদিকে জাতীয় গ্রন্থাগারের ছাদে উঠে প্রতিবাদকারীরা বড় ব্যানার টানায়, যেখানে নেতানিয়াহুকে লক্ষ্য করে লেখা ছিল—‘তুমি হত্যা করেছ’।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকার চরম দক্ষিণপন্থিদের চাপে জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে। তাদের অভিযোগ, ‘রাষ্ট্র নিজের নাগরিকদের এড়িয়ে চলতে পারে না।’