শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০৩:১২ এএম

ট্রাম্পের ২০ দফার ‘কিছু অংশে’ সম্মত হামাস

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০৩:১২ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি- সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার বেশ কয়েকটি অংশ মেনে নিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। তবে কিছু বিষয়ে এখনও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

আল জাজিরার এক খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রতি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া শুক্রবার (৩ অক্টোবর) হামাস যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প সংগঠনটিকে রোববার পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছিলেন।

এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে বর্ণিত বিনিময় সূত্র অনুসারে প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে সব ইসরায়েলি বন্দি (জীবিত কিংবা মৃত) ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে।” একই সঙ্গে সংগঠনটি জানায়, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যেতে তারা প্রস্তুত।

এ ছাড়া হামাস আরও জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং আরব ও ইসলামী দেশগুলোর সমর্থনে গাজা উপত্যকার প্রশাসন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত রয়েছে।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প তার প্রস্তাব দেওয়ার পর হামাসকে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য 'তিন বা চার দিনের' আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। আরব দেশগুলোসহ পশ্চিমা বিশ্ব শক্তিগুলো এটিকে স্বাগত জানিয়েছে।

এক নজরে ট্রাম্পের ২০-দফা প্রস্তাব (সংক্ষেপিত):

১. গাজাকে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল করা হবে যাতে এটি কোনো প্রতিবেশীর জন্য হুমকি না হয়ে উঠে।

২. চরম দুর্দশায় থাকা গাজাবাসীর কল্যাণে গাজার উন্নয়ন করা হবে।

৩. যদি সব পক্ষ এই প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে এখনই যুদ্ধ থামানো হবে। জিম্মি মুক্তির বিষয়ে সবার সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করা হবে। এই সময়ের মধ্যে আকাশ ও স্থলপথের সব সামরিক অভিযান স্থগিত করা হবে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।

৪. ইসরায়েল এই চুক্তি মেনে নেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গাজা থেকে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফেরত দিতে হবে।

৫. সব জিম্মি মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েলে যাবজ্জীবন কারাবাসী ২৫০ জন ও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে থাকবে নারী ও শিশু। প্রতি একজন মৃত ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষের বিনিময়ে ১৫ মৃত গাজাবাসীর দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া হবে।

৬. সব জিম্মি ফেরত আসার পর যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে ও অস্ত্র সমর্পণ করবে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া যাবে। হামাসের যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চান তাদের নিরাপদে যে দেশে যেতে চান সে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

৭. চুক্তি মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গাজা উপত্যকায় পুরোপুরিভাবে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি মানবিক সহায়তাবিষয়ক চুক্তি অনুসারে ত্রাণ পাঠানো হবে। অবকাঠামো (পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন) ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। হাসপাতাল ও বেকারি গড়ে তোলা হবে এবং ধ্বংসাবশেষ সরাতে ও রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো হবে।

৮. জাতিসংঘ ও এর সংস্থাগুলো, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেগুলো কোনো পক্ষের সঙ্গে জড়িত নয় সেগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির চুক্তি মোতাবেক রাফাহ সীমান্ত দিয়ে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করা হবে।

৯. অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গাজা পরিচালনা করবে। অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি গাজার প্রতিদিনকার পরিষেবা ও পৌরসভাগুলো পরিচালনা করবে। যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে।

'বোর্ড অব পিস' নামের অন্তর্বর্তী নতুন আন্তর্জাতিক কমিটি এগুলো দেখভাল করবে। এই কমিটির প্রধান হবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্যদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এই কমিটিতে থাকবেন। এই কমিটি গাজা পুনর্গঠনের তহবিল পরিচালনা করবে। যতদিন না পর্যন্ত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংস্কার শেষ হয় এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে নিতে না পারে ততদিন পর্যন্ত এই কমিটি কাজ করে যাবে।

এই কমিটি গাজাবাসীকে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিকমানের সেবার জন্য আধুনিক ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা ও গাজায় বিনিয়োগের আহ্বান জানাবে।

১০. গাজার পুনর্গঠন নিয়ে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্যানেল তৈরি করা হবে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে আধুনিক ক্রমবর্ধমান শহর গড়েছেন তাদেরকে এই প্যানেলে রাখা হবে।

ভবিষ্যতে গাজায় কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বিনিয়োগ টানতে যথাযথ বিনিয়োগ প্রস্তাব ও চমৎকার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে এমন সুপরিচিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ কাজে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

১২. কাউকে গাজা থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হবে না। তবে যারা স্বেচ্ছায় চলে যেতে চান তারা তা পারবেন। আবার কেউ চাইলে ফিরেও আসতে পারবেন। সবাইকে থাকার জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে। গাজার উন্নয়নে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

১৩. গাজার শাসনে হামাস ও অন্যান্য সংগঠনকে কোনোভাবেই অংশ নিতে দেওয়া হবে না। সব টানেল ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করে দেওয়া হবে। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানের গাজার নিরস্ত্রীকরণের কাজ করা হবে। নতুন গাজার লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

১৪. হামাস ও অন্যান্য দলগুলো যেন তাদের নীতির প্রতি দায়বদ্ধ থাকে তা নিশ্চিতে আঞ্চলিক অংশীদাররা গ্যারান্টি দেবে। নতুন গাজা যেন এর প্রতিবেশীদের অথবা নিজেদের জনগণের জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে সেই নিশ্চয়তাও তারা দেবেন।

১৫. গাজায় মোতায়েন করার জন্য অস্থায়ী ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ) গঠনে যুক্তরাষ্ট্র এর আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। গাজায় ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী গড়তে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে। জর্ডান ও মিশরের সঙ্গে আলোচনা করবে। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বাহিনী ইসরায়েলে ও মিশরের সঙ্গে কাজ করবে।

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা একীভূত করবে না। আইএসএফ স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করলে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) চুক্তি মোতাবেক প্রত্যাহার করা হবে।

১৭. হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান বা বাস্তবায়নে গড়িমসি করলে আইডিএফ সন্ত্রাসমুক্ত এলাকাগুলো আইএসএফের হাতে তুলে দেবে।

১৮. সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থাননীতির ওপর ভিত্তি করে আন্তঃধর্মীয় আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে।

১৯. যতদিন গাজা পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সংস্কারের কর্মসূচি চলবে ততদিন ফিলিস্তিনের স্বশাসন ও নিজেদের রাষ্ট্র গঠনের পথে শর্তগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলবে।

২০. পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানের জন্য ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করবে যুক্তরাষ্ট্র।

Link copied!