গাজায় শান্তি ফেরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তাতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। প্রস্তাবে একমত হয়েছে ইসরায়েলও। এখন কেবল ২০ দফা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষা। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে হামাস যে বিবৃতি জারি করেছে, তাতে কয়েকটি শর্তের কথাও বলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের প্রস্তাবকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়ে গেছে ধোঁয়াশা। হামাস জানিয়েছে, বিস্তারিত কথাবার্তার জন্য তারা আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত।
কোথায় কোথায় ট্রাম্পের সঙ্গে সহমত
ট্রাম্প বলেছিলেন, ২০ দফা প্রস্তাবে ইসরায়েল প্রকাশ্য সমর্থন জানালে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব ইসরায়েলি জিম্মিদের ছেড়ে দেবে হামাস। এরপর ইসরায়েল মুক্তি দেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করা ২৫০ ফিলিস্তিনিকে। এ ছাড়া, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল যত গাজাবাসীকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে। হামাস এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা থেকে জীবিত এবং মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই ‘প্রয়োজনীয় শর্ত’ কী, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল দফায় দফায় সেনা প্রত্যাহার করবে গাজা থেকে। এই সময় বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলবে। ইসরায়েল এ সময় গাজায় কোনো বোমাবর্ষণ বা হামলা চালাবে না। হামাস এই পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত। গাজা থেকে ইসরায়েলের বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায় তারা। যদিও প্রত্যাহারের বিভিন্ন দফা নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
শান্তি প্রস্তাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যেতে হবে না। অবিলম্বে সেখানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। বিভিন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামো, বেকারি ও হাসপাতালের পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ধ্বংসস্তূপ সরানো এবং রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই গঠনমূলক কাজগুলো করবে। হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার চূড়ান্ত বিরোধী তারা।
কোথায় কোথায় মতানৈক্য
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আপাতত গাজায় একটি অস্থায়ী অরাজনৈতিক সরকার তৈরি হবে। এই সরকারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন ফিলিস্তিন এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের বিশেষজ্ঞরা। যদিও নির্দিষ্ট করে কোনো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী বা ব্যক্তিবিশেষের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, এই প্যানেলের অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী। যার প্রধান হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই।
ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও থাকবেন সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে। হামাস কিন্তু এই প্রস্তাব পুরোপুরি মানছে না। তারা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে ইসলামি এবং আরব দেশগুলো দ্বারা সমর্থিত কোনো স্বাধীন ফিলিস্তিনপন্থিদের সংস্থার হাতে তারা গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব তুলে দেবে।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় হামাসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো যোগ থাকবে না। গাজার ‘অসামরিকীকরণ’ শুরু হবে। হামাসের এতেও আপত্তি আছে। তারা জানিয়েছে, নিজেদের তারা একটি সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনপন্থি জাতীয় কাঠামো হিসেবে দেখে। ‘অসামরিকীকরণ’ নিয়ে আপাতত তারা কোনো মন্তব্য করেনি। পাশাপাশি গাজার অস্থায়ী সরকারে নিজেদের থাকার কথা জানিয়েছে হামাস।