ঢাকা রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে নিয়ে ইসরায়েলি বিমানের রহস্যময় যাত্রা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
ছবিটি এআই দিয়ে বানানো।

গাজা উপত্যকা থেকে দেড়শরও বেশি ফিলিস্তিনিকে নিয়ে একটি রহস্যময় চার্টার্ড বিমান দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অবতরণ করেছে। যথাযথ ভ্রমণ নথি না থাকায় বিমানটি অবতরণের পরও যাত্রীদের প্রায় ১২ ঘণ্টা টারম্যাকে আটকে রাখা হয়। এ ঘটনায় দক্ষিণ আফ্রিকা তদন্ত শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ও. আর. টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি পৌঁছায়।

অভিবাসন সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, যাত্রীরা দক্ষিণ আফ্রিকায় কোথায় অবস্থান করবেন এবং কতদিন থাকবেন- তা বলতে সক্ষম নন। তাছাড়া গাজা থেকে বের হওয়ার জন্য সাধারণত ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যে বহির্গমন স্ট্যাম্প বা স্লিপ দেয়, যাত্রীদের কাছে তা ছিল না। ফলে তাদের গভীর রাত পর্যন্ত বিমানের ভেতর অবস্থান করতে হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে বলেছে, ১৫৩ জন ফিলিস্তিনি- যাদের মধ্যে পরিবার, শিশু এবং নয় মাসের এক গর্ভবতী নারীও ছিলেন- অত্যন্ত গরম, খাবার ও পানি ছাড়া ‘শোচনীয় পরিস্থিতিতে’ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিলেন। এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার প্রাথমিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ফিলিস্তিনি দূতাবাস জানিয়েছে, ফ্লাইটটি আয়োজন করেছে একটি অনিবন্ধিত ও প্রতারণামূলক সংস্থা, যারা গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পরিবারগুলোর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তাদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে। জটিলতা দেখা দিলে সংগঠনটি আবার দায় অস্বীকারের চেষ্টা করে।

যদিও দূতাবাস সংস্থার নাম উল্লেখ করেনি, কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন- আল-মাজদ নামে একটি সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েল আল-মাজদের বাসগুলোকে পাহারা দেয় যা গাজা উপত্যকার একটি সভাস্থল থেকে ফিলিস্তিনিদের কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে নিয়ে আসে। এরপর সেখান থেকে তাদের ইসরায়েলের র‍্যামন বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হয়।

এ ঘটনার পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, নাইরোবিতে যাত্রাবিরতির পর কীভাবে ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছালেন তা এখন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে।

তিনি আরও বলেছেন, গাজার এসব মানুষকে ‘রহস্যজনকভাবে নাইরোবি অতিক্রমকারী একটি বিমানে তুলে আনা হয়েছে।’ তবে মানবিক কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত তাদের গ্রহণ করেছে।

মানবিক সংস্থা ‘গিফট অফ দ্য গিভার্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ সুলিমান অভিযোগ করেছেন, যাত্রীরা প্রথমে জানতেনই না তারা কোথায় যাচ্ছেন। কেউ কেউ ভেবেছিলেন তারা অন্য কোনো দেশে যাচ্ছেন। কারো কাছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার ভিসা ছিল-পরে তাদের সে সব দেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে,  বিশ্লেষকরা ধারণা করছে, এটি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি এনজিওর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আল-মাজদ ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত। যদিও তারা এ দাবির কোনো প্রমাণ দেয়নি এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘কোগাট’ এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তৃতীয় কোনো দেশের অনুমোদন পাওয়ার পরই ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪০ হাজার গাজাবাসী বিদেশে গেছেন- ইউরোপ, আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রতি সপ্তাহেই কয়েকশ মানুষ পাঠানো হচ্ছে।

গিফট অফ দ্য গিভার্স জানায়, কয়েক সপ্তাহ আগে নিঃশব্দে আরেকটি বিমান ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেমেছিল। সে ফ্লাইটের আগমন সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়নি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই বছরের যুদ্ধে ৬৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং তাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। এ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পৌঁছানো এসব মানুষের হতাশা ও মানবিক বিপর্যয় স্পষ্ট।

আল-মাজদ ইউরোপ নামে একটি সংস্থা, যারা পূর্বে গাজা থেকে মানুষ বের করার কাজে যুক্ত ছিল, নিজেদের ২০১০ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত এবং জেরুজালেমভিত্তিক মানবিক সংগঠন হিসেবে দাবি করে। তবে তাদের ওয়েবসাইটে কোনো ফোন নম্বর, ঠিকানা বা সহযোগী সংস্থার বিস্তারিত নেই। বরং সতর্ক করা হয়েছে- অনেকেই আল-মাজদের নামে ভুয়া অর্থ বা ক্রিপ্টোকারেন্সি চাচ্ছে।