ইসরায়েল লেবাননে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে চলমান ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে আরও চাপের মুখে ফেলেছে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যদিও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
জাতীয় সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, মাউন্ট সাফি, জাবা শহর, জেফতা উপত্যকা এবং আজ্জা–রুমিন আরকির মধ্যবর্তী এলাকায় ‘বেশ কয়েকটি’ হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এক্স-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত একাধিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে রাদওয়ান ইউনিটের ব্যবহৃত একটি বিশেষ অভিযান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বেশ কিছু ভবন এবং একটি রকেট নিক্ষেপের স্থান রয়েছে।
ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে প্রথমবারের মতো উভয় দেশ বেসামরিক দূত পাঠানোর কয়েকদিন পরই এ হামলা হলো। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের আলোচনার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সম্প্রতি জানান, দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নিয়েছে, যার লক্ষ্য লেবাননে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা বন্ধ করা। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গঠিত যুদ্ধবিরতিটি মূলত ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর এক বছরেরও বেশি সময়ের সংঘর্ষ থামিয়ে দেয়।
কিন্তু এরপরও ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই লেবাননের ভেতরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে লেবাননে অন্তত ১২৭ জন বেসামরিক নাগরিক, এর মধ্যে শিশু রয়েছে, নিহত হয়েছে। এসব হামলাকে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গত সপ্তাহে বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার হাইথাম আলী তাবতাবাই নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা আরও বেড়েছে। তবে হিজবুল্লাহ এখনো বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
ইসরায়েল দাবি করছে, লেবানন হিজবুল্লাহকে তাদের অস্ত্রাগার সরিয়ে নিতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অন্যদিকে লেবানন সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম গত সপ্তাহে জানান, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী দেখতে চান তারা- বিশেষ করে ইসরায়েলের অভিযোগ যে হিজবুল্লাহ পুনর্গঠন করছে, তা যাচাই করতে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবকাঠামো ভাঙতে লেবানন সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিশ্চিত করতে।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে এই যাচাইকরণ ব্যবস্থায় মার্কিন ও ফরাসি সেনাদের অন্তর্ভুক্ত করতেও লেবানন প্রস্তুত।
ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় দেশটিতে আশঙ্কা বেড়েছে যে বিমান আক্রমণের পরিধি আরও বিস্তৃত হতে পারে। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইসরায়েল লেবাননের ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত রাখা এবং দক্ষিণের পাঁচটি স্থানে দখল বজায় রাখলে তারা কোনো অবস্থাতেই অস্ত্র ছাড়বে না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন