ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

কোন অবস্থায় একটি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম
গাজা খাবারের জন্য হাহাকার। ছবি- সংগৃহীত

জাতিসংঘ সমর্থিত পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) সতর্ক করেছে যে, গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বাস্তব হয়ে উঠছে।

সংস্থাটি মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজার বেশিরভাগ এলাকায় খাদ্য সংকট ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষের মাত্রা অতিক্রম করেছে। গাজা শহরে তীব্র অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানায় আইপিসি।

আইপিসি সরাসরি কোনো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে না। তারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে, যার ভিত্তিতে সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করতে পারে।

সংস্থাটির মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার জন্য অন্তত ২০ শতাংশ পরিবারের খাদ্য সংকটে অনাহারের মুখে পড়া, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ৩০ শতাংশের বেশি তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা এবং প্রতিদিন প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে অন্তত দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বা চারজন শিশুর ক্ষুধাজনিত মৃত্যু ঘটতে হয়।

সর্বশেষ প্রতিবেদনে আইপিসি বলেছে, গাজা উপত্যকার অধিকাংশ এলাকায় এই তিনটি সূচকের অনেকগুলোই পূরণ হচ্ছে। ব্যাপক খাদ্য সংকট, তীব্র অপুষ্টি এবং ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। গাজা শহরের পরিস্থিতি বিশেষভাবে মারাত্মক, যেখানে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

  • অন্তত ২০ শতাংশ পরিবার চরম খাদ্য সংকটে ভোগে এবং অনাহার বা অত্যন্ত সীমিত খাদ্যে বেঁচে থাকে।
  • পাঁচ বছরের নিচের ৩০ শতাংশের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়।
  • প্রতি ১০ হাজার জনে প্রতিদিন অন্তত দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বা চারজন শিশুর মৃত্যু ঘটে ক্ষুধা বা অপুষ্টিজনিত কারণে।

এই তিনটি শর্ত একসঙ্গে পূরণ হলে জাতিসংঘ বা সংশ্লিষ্ট সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অঞ্চলটিকে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে।

গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় ‘ইসরায়েলি’ বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ‘মেডসঁ সঁ ফ্রঁতিয়েরে’র গাজা কার্যক্রম প্রধান আমান্ডে বাজেরোল বলেন, অব্যাহত যুদ্ধ ও সাহায্য অবরোধের কারণে তারা কোনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ চালাতে পারছেন না, যা দুর্ভিক্ষ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে পারত।

একইভাবে ‘অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারে’র মধ্যপ্রাচ্য কার্যক্রম পরিচালক জ্যঁ-রাফায়েল পুতু জানান, ‘ইসরায়েলি’ সেনাবাহিনীর নির্দেশে জনগণকে বারবার স্থানান্তর এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা সংকটকে আরও গভীর করেছে।

তবে ‘ইসরায়েলে’র প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ চলছে না এবং কোনো ‘অনাহারের নীতি’ অনুসরণ করা হচ্ছে না। তার দাবি, গাজায় দুর্ভিক্ষের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এদিকে স্কটল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, গাজায় বাস্তব অর্থেই দুর্ভিক্ষ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরে অপুষ্টির কারণে গাজায় ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩ জনই মারা গেছেন এ মাসে। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের নিচের শিশু ২৪ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘ইসরায়েলি’ অভিযানে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।