২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১৩ লাখ মানুষ নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিক প্রতিরোধ কার্যক্রমে দীর্ঘদিনের অগ্রগতি থমকে গেছে এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়ায় চিকিৎসা, পরীক্ষা ও কমিউনিটি-নির্ভর সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানায়, বৈশ্বিক এইডস প্রতিরোধ এখন একটি সংকটপূর্ণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যেখানে নতুন সংক্রমণের বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে।
ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘আমরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন কমে গেছে, প্রতিরোধ কার্যক্রম স্থবির। একইসঙ্গে আমাদের সামনে বড় সুযোগও রয়েছে, নতুন সুরক্ষামূলক প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার বাড়ানো এখন সবচেয়ে জরুরি।’
সংস্থাটি জানায়, বিশ্বব্যাপী এখনও কলঙ্ক, বৈষম্য ও আইনগত বাধার কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত ছিল এবং ওই বছর ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ এইচআইভি–সম্পর্কিত কারণে মারা গেছে।
ডব্লিউএইচও সতর্ক করেছে, হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন হ্রাস পাওয়ায় অনেক দেশের প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম গুরুতর এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু দেশে আংশিকভাবে অথবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এসব সেবা।
এইডস ভ্যাকসিন অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন জানায়, শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক দাতাদের অর্থ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চলতি বছর ২০২৪ সালে প্রিপ ব্যবহার করা ২৫ লাখ মানুষ সেবাটি হারাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই ধাক্কা দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ২০২৫ সালে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ডব্লিউএইচও লেনাকাপাভির নামের নতুন এক প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস ওষুধ অনুমোদন করেছে, যা বছরে মাত্র দুইবার ইনজেকশন হিসেবে নিতে হয়।
দৈনিক ওষুধ খেতে অসুবিধা হয় বা স্বাস্থ্যসেবায় যেতে গিয়ে সামাজিক কলঙ্কের মুখে পড়েন এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি ‘রূপান্তরমূলক উদ্ভাবন’ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবর ডব্লিউএইচও ওষুধটি প্রি-কোয়ালিফাই করে, যার ফলে দ্রুত দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ায় অনুমোদন পাওয়ার পথ খুলে যায়।
ডব্লিউএইচও’র এইচআইভি, টিবি, হেপাটাইটিস ও যৌন সংক্রমণবিষয়ক বিভাগের পরিচালক ড. তেরেজা কাসায়েভা বলেন, ‘আমরা এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি। কিন্তু জরুরি বিনিয়োগ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ এই অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত হবে।’
ডব্লিউএইচও এইচআইভি সেবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় একীভূত করতে, স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে সকল সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বর্তমান ব্যাঘাত সত্ত্বেও ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর দৃঢ় সংকল্পই বিশ্বকে এইডস নির্মূলের পথে এগিয়ে রাখছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন