ভারতের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকে পাকিস্তানে নিয়ে সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে যুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে লাহোরের ব্যবসায়ী নোশাবা শহজাদ ওরফে ‘ম্যাডাম এন’-এর বিরুদ্ধে। তিনি ‘জয়ানা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম’ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নোশাবা শহজাদ পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্ভিস অফিসারের স্ত্রী। তিনি আইএসআই-এর হয়ে কাজ করতেন। তার কোডনেম ছিল ‘ম্যাডাম এন’। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেপ্তার হওয়া সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম উঠে আসে। জানা যায়, তিনি ভারতে একটি সুপরিকল্পিত ‘স্লিপার সেল’ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মিশনে ছিলেন, যার আওতায় প্রায় ৫০০ জন গুপ্তচর নিযুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল।
ভিসা ও ভ্রমণের নামে ‘গুপ্তচর’ নিয়োগ
তথ্য অনুযায়ী, নোশাবা শহজাদ গত ছয় মাসে প্রায় ৩ হাজার ভারতীয় এবং ১ হাজার ৫০০ প্রবাসী ভারতীয় (NRI)-কে পাকিস্তান ভ্রমণে সহায়তা করেছেন। এর মধ্যে অনেক হিন্দু ও শিখ তীর্থযাত্রী ছিলেন, যাদের পাকিস্তানে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করতেন ‘ম্যাডাম এন’। তার এজেন্সি পাকিস্তানের Evacuee Trust Property Board-এর সঙ্গে অংশীদারত্বে হিন্দু ও শিখ তীর্থ ভ্রমণের একচেটিয়া অনুমতি পেয়েছিল।
দিল্লির পাক দূতাবাসে ছিল প্রভাব
নোশাবার প্রভাব ছিল দিল্লিস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের ভিসা বিভাগেও। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, তিনি ভিসা অফিসার সুহেল কামার, বাণিজ্য কনস্যুলার উমর শেরিয়ার এবং আইএসআই-এর অপারেটিভ দানিশ ওরফে এহসান-উর-রহমান-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। একটি ফোন কলে যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের জন্য ভিসা নিশ্চিত করা যেত তার মাধ্যমে। উল্লেখ্য, দানিশকে মে মাসে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ভারতে এজেন্ট নিয়োগ
সম্প্রতি ‘ম্যাডাম এন’ ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন শহরে ট্রাভেল এজেন্ট নিয়োগ করেন, যারা তার কোম্পানির প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ভারতীয় নাগরিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে তা পাকিস্তানি প্রচারণার কাজে ব্যয় করা হতো।
ধর্মীয় সফরের আড়ালে ‘গোয়েন্দা চক্র’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পর্যটন বা ভ্রমণ ভিসা চালু না থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের সফরের অনুমতি কীভাবে মিলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের বিপদে ফেলা এবং তরুণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে যুক্ত করাটা নতুন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ও ডিজিটাল যুদ্ধের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।