ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা যেভাবে ধ্বংস করতে চেয়েছিল ইসরায়েল-ভারত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ০৩:১২ পিএম
পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানি আবদুল কাদির খান। ছবি - সংগৃহীত

পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক আবদুল কাদির খান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে, তারা পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি হওয়া থেকে বিরত রাখতে নানা গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল। 

১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। যদিও ভারত সরকার সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেয়।

১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে ইসরায়েল ভারতকে প্রস্তাব দেয়, উভয় দেশ মিলে বোমা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির সেই পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার। ইসরায়েলি এফ-১৬ এবং এফ-১৫ বিমান নিয়ে এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হবে।

আবদুল কাদির খান বিশ্বাস করতেন, একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে তিনি তার দেশকে বিদেশি হুমকি থেকে বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত থেকে রক্ষা করেছেন।

আবদুল কাদির ইউরেনকোর গোপন এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন, যেখান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সেন্ট্রিফিউজের ব্লুপ্রিন্ট। সেখানে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য সমৃদ্ধ করা হতো এবং তা পারমাণবিক বোমার জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হতো।

১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি রহস্যজনকভাবে নেদারল্যান্ডস থেকে হঠাৎ করে পাকিস্তানে চলে যান। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, ‘পাকিস্তানে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’

পরে আবদুল কাদিরের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডস থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের একটি ব্লুপ্রিন্ট চুরি করার অভিযোগ ওঠে, যা ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র-গ্রেডের জ্বালানিতে পরিণত করতে পারে।

ওই বছরেই জুলাই মাসে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে গবেষণা পরীক্ষাগার স্থাপন করেন তিনি যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা শুরু হয়।

অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং ডামি কোম্পানি বানিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করা হতো। যদিও উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রয়েছে যে পাকিস্তানের সামরিক প্রতিষ্ঠান আবদুল কাদিরের এ কাজকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছিল।

তবে উদ্যোগের প্রস্তাবকারী প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ব্যতীত সরকারের সবাই এ ব্যাপারে অজ্ঞাত ছিল।

১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে ইসরায়েল ভারতকে প্রস্তাব দেয়, উভয় দেশ মিলে বোমা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কাহুতা এলাকায় অবস্থিত সেই পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই হামলার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

ইসরায়েলি এফ-১৬ এবং এফ-১৫ বিমান নিয়ে এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ভারতের গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হবে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী পরে পিছিয়ে আসেন এবং পরিকল্পনাটি বাতিল করা হয়।

১৯৮৭ সালে ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনো আরেকবার পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করা হয়।

ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কৃষ্ণস্বামী সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে একটি যুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন, যাতে ভারত পাকিস্তানের সেই পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলতে পারে।

সেনাপ্রধান কৃষ্ণস্বামী সামরিক মহড়ার জন্য পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা ও কয়েক শ ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান পাকিস্তান সীমান্তে পাঠিয়েছিলেন। এটি ছিল পাকিস্তানের জন্য বড় একটা উসকানি।

কিন্তু শত্রুতা উসকে দেওয়ার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কারণ, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সেনাপ্রধানের সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে যথাযথভাবে অবহিত ছিলেন না। তিনি তখন পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর পদক্ষেপই নিয়েছিলেন।

এভাবেই ইসরায়েল-ভারতের পাকিস্তান হামলায় পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসে রক্ষাকবচ হয়ে দারিয়েছিলেন আবদুল কাদির খান।