ঢাকা রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

নির্বাচনী প্রচারণায় গুলিবিদ্ধ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সিনেটর মিগেল উরিবে। ছবি- সংগৃহীত

কলম্বিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণার মঞ্চে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সিনেটর মিগেল উরিবে। রাজধানী বোগোটার ফনতিবন এলাকায় শনিবার বিকেলে এক উন্মুক্ত পার্কে প্রচারের সময় ১৫ বছর বয়সী এক সশস্ত্র কিশোর পেছন থেকে তার মাথায় গুলি চালায়। 

তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে সান্তে ফে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার অবস্থাকে ‘সঙ্কটজনক’ বলা হয়।

৩৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিক ডেমোক্রেটিক সেন্টার দলের প্রার্থী হিসেবে ২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন। 

এই দলটি দেশটির অন্যতম প্রধান বিরোধী রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল, যার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট আলভারো উরিবে। যদিও গুলিবিদ্ধ মিগেল উরিবের সঙ্গে আলভারো উরিবের কোনো আত্মীয়তা নেই।

আহত রাজনীতিকের স্ত্রী মারিয়া ক্লাউদিয়া তরাজোনা সামাজিক মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়েছেন। 

তিনি লেখেন, ‘মিগেল এখন জীবনের জন্য লড়ছে। চলুন, যারা তাকে ভালোবাসি, সকলে মিলে তার জন্য প্রার্থনা করি।’

প্রচারের সময় মাথায় দুইবার ও হাঁটুতে একবার গুলিবিদ্ধ হন উরিবে। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দে লোকজন দিগ্বিদিক ছুটে পালাচ্ছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিওতে দেখা যায়, উরিবের শরীর ঢলে পড়ছে মাটিতে।

হামলার পর ঘটনাস্থল থেকেই একটি গ্লক পিস্তলসহ ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, হামলার ঘটনায় আরও কেউ জড়িত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, তিনি হাসপাতালে উরিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। তার ভাষায়, ‘এটি শুধু একজন প্রার্থীর ওপর নয়, কলম্বিয়ার গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত।’

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্সি এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এই সহিংসতার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। এমন কর্মকাণ্ড রাজনীতির স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ করে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে হামলাকে ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেন। 

তিনি দাবি করেন, ‘কলম্বিয়ার শীর্ষ পর্যায় থেকে আসা উসকানিমূলক বামপন্থী ভাষ্যই এই সহিংসতার পেছনে দায়ী।’

উল্লেখযোগ্যভাবে, মিগেল উরিবে কলম্বিয়ার এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার মা সাংবাদিক ডায়ানা তরাবে ১৯৯১ সালে মেদেলিন ড্রাগ কার্টেলের হাতে অপহৃত হয়ে নিহত হন। 

তার নানা ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুলিও সেসার তরাবে আয়ালা। কলম্বিয়ার এই তরুণ রাজনীতিক হার্ভার্ড থেকে স্নাতক করে ২০২২ সালে সিনেটে নির্বাচিত হন। গত বছর অক্টোবরে মায়ের মৃত্যুর স্থান থেকেই নিজের প্রার্থিতার ঘোষণা দেন তিনি।

এই হামলার পর কলম্বিয়ার সাবেক চার প্রেসিডেন্ট, বিরোধী দলগুলো এবং আন্তর্জাতিক মহল একযোগে তীব্র নিন্দা জানায়। 

দেশটির ইতিহাসে ৮০ ও ৯০ দশকে যেভাবে একের পর এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হত্যার শিকার হন, এই হামলা যেন সেই অশান্ত অতীতের ছায়া ফিরিয়ে আনছে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।