মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, বরং তেলের স্বার্থেই ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসন যখন ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে, ঠিক সে সময়ই এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সিএনএন কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেত্রো যুক্তি দেখান, ভেনেজুয়েলার বিশাল তেলের মজুতই যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘(তেলই) এই সংকটের মূল।’ পেত্রো আরও যোগ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্র নিয়ে ভাবছেন না, মাদক পাচারের কথা তো বাদই দিলাম।’
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে তুলনা করে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই তার সঙ্গে কলম্বিয়ান এই নেতার মতবিরোধ চলছে। সম্প্রতি পেত্রোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে তার ভিসা বাতিল এবং অক্টোবরে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো ঘটনাও রয়েছে।
‘বিশ্বজুড়ে অবৈধ মাদক ব্যবসায় ভূমিকা রাখার’ অভিযোগে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে সক্রিয় থাকা এম-১৯ গেরিলা আন্দোলনের সদস্য পেত্রো এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পেত্রো বলেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ‘সমস্যা হলো গণতন্ত্রের অভাব।’ তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, মাদুরোকে মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত করে এমন কোনো প্রমাণ কলম্বিয়ার কোনো তদন্তে পাওয়া যায়নি।
পেত্রো সিএনএনকে জানান, তার প্রশাসন ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কোকেন জব্দ করেছে। তিনি যুক্তি দেন, মাদক জব্দের হার যতটা বেড়েছে, ফসল উৎপাদনের হার তার চেয়ে অনেক কম।
এছাড়া, কলম্বিয়ার কর্মকর্তারা রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়ার (ফার্ক) ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে জড়িত—এমন অভিযোগও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফার্ক একটি গেরিলা গোষ্ঠী, যা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
এদিকে সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা-ভিত্তিক ‘কার্টেল দে লস সোলেস’ (সূর্যের চক্র) নামে একটি সংগঠনকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মাদুরোর সঙ্গে সম্পৃক্ত মাদক চক্রকে আক্রমণ এবং মাদক পাচারের পথ বন্ধ করার জন্য ট্রাম্প আগস্টে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। কারাকাস বরাবরই দাবি করে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকার পরিবর্তন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ২১টি জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যেগুলোতে মাদক ছিল বলে দাবি করা হয়। এসব হামলায় ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ভেনেজুয়েলার মাটিতে কথিত মাদক পাচারের লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালাতে পারেন।



