ছয়টি গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক তৈরির কারখানা স্থাপনে ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করবে যুক্তরাজ্য সরকার। যার লক্ষ্য শত্রুদের আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা—এমনটাই বলা হয়েছে তাদের নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলপত্রে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জন হিলি জানান, এই অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে তৈরি সাত হাজার পর্যন্ত দূরপাল্লার অস্ত্র সংগ্রহের জন্য একটি ‘সর্বদা সক্রিয়’ অস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করা হবে।
১৩০ পৃষ্ঠার এই প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় ব্রিটেনের নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে, যার মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে আসা ‘তাৎক্ষণিক ও তীব্র’ হুমকি অন্যতম গুরুত্ব পাবে। এটি ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পাওয়া শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
আগামী সোমবার (২ জুন) প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা এসেছে এই উপলব্ধি থেকে যে, ব্রিটেনকে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা যুদ্ধকালীন প্রয়োজনে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে পারে।
হিলি বলেন, ‘পুতিনের ইউক্রেনে অবৈধ আগ্রাসন থেকে আমরা যেসব কঠিন শিক্ষা পেয়েছি, তা স্পষ্ট করে যে, একটি সেনাবাহিনী ততটুকুই শক্তিশালী, যতটা শক্তিশালী তার পেছনে থাকা শিল্পখাত। আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করছি যেন শত্রুদের প্রতিরোধ করতে পারি এবং ঘরে-বাইরে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা খাত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি ইঞ্জিনে’ পরিণত হবে এবং এতে দক্ষ কর্মসংস্থান বাড়বে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ডসহ বর্তমান সংসদীয় মেয়াদে মোট গোলাবারুদ ব্যয় দাঁড়াবে ৬ বিলিয়ন পাউন্ড, যা যুক্তরাজ্যজুড়ে এক হাজার ৮০০ চাকরি সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেন, ‘একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা। অস্ত্র ও গোলাবারুদে বিনিয়োগ এবং হাজার হাজার চাকরির পেছনে সমর্থনই দেখায়—এই দুই বিষয় একে অপরের পরিপূরক।’
পর্যালোচনায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, যেন তারা এমন একটি শিল্প কাঠামো তৈরি করে, যাতে ভবিষ্যতে যুদ্ধের তীব্র চাহিদা মেটাতে গোলাবারুদের মজুদ দ্রুত বাড়ানো সম্ভব হয়।
এ ছাড়া সরকার সামরিক পরিবারের জন্য বাড়িঘরের অবস্থার উন্নয়নেও ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে, যার আওতায় বয়লার মেরামত, ছাদের সমস্যা ও ঘরের স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করার কাজ হবে।
হিলি বলেন, ‘আমাদের সেনারা আমাদের নিরাপদ রাখতে ও দেশকে সেবা দিতে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করে। অথচ এতদিন আমরা তাদের পরিবারকে নিম্নমানের ঘরে থাকতে বাধ্য করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ক্ষমতায় আসার পরপরই এই প্রতিরক্ষা কৌশলপত্র তৈরির নির্দেশ দেন, যার লক্ষ্য একটি ‘আরও বিপজ্জনক ও অস্থির বিশ্বের’ জন্য যুক্তরাজ্যকে প্রস্তুত রাখা।
এই নথিতে ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে সবচেয়ে তীব্র সামরিক ও নিরাপত্তা হুমকির চিত্র তুলে ধরা হবে, যদিও এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে মস্কোর সাইবার এবং নাশকতামূলক কার্যকলাপের তীব্রতার অর্থ হলো যুক্তরাজ্য এরই মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে নেমে গেছে।
এটি যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান অবস্থার একটি মূল্যায়নও তুলে ধরবে। এই সপ্তাহের পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে, সেনাবাহিনীর আকার লক্ষ্যমাত্রার নিচে নেমে এসেছে নেপোলিয়নের যুগ ও তার আগের সময়ের পর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে, ১ এপ্রিল পূর্ণ-সময়ের প্রশিক্ষিত সৈন্যের সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৬০ ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৩ শতাংশ কম।
পর্যালোচনায় প্রতিরক্ষা ব্যয়ের জন্য নতুন প্রতিশ্রুতি নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে না, বরং ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ২.৫ শতাংশ এবং পরবর্তী সংসদে ৩ শতাংশ করার জন্য স্টারমারের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হবে।