সরকারিভাবে নির্ধারিত চামড়ার দাম না পেয়ে এবারও হতাশ হয়েছেন সাতক্ষীরার বিভিন্ন চামড়া বিক্রেতা। ঈদের দিন দুপুর থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া কোরবানির পরে এলাকার বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও ওস্তাদরা মিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ তারা।
বিক্রেতারা অভিযোগ করেন, চাহিদামতো চামড়ার দাম পাচ্ছেন না। গরুর চামড়া মানভেদে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, তবে এমন চামড়ার সংখ্যা খুবই কম।
অন্যদিকে, ছাগলের চামড়া কিনতে আগ্রহ নেই অধিকাংশ চামড়া আড়তের ক্রেতাদের। ফলে ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি।
শনিবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারের একটি চামড়া আড়তে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মাদ্রাসার হুজুর ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে চামড়া এনে জড়ো করছেন। কিন্তু সরকারি নির্ধারিত মূল্যে চামড়ার দাম না পেয়ে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
২০০টি চামড়া বেচতে আসা ঘোনা গ্রামের আলফাজ হুজুর বলেন, ‘আমরা এখানে প্রতিবার চামড়া দিই, উনারা বুঝ করে টাকা দেন। তাই এবারও কোনো দরদাম না করেই দিয়ে দিয়েছি। কারণ ব্যবসায়ীরা দাম কম দিলেও আমাদের কিছু করার থাকে না। চামড়া তো আমরা রাখতে পারব না।’
‘চামড়া রাখলে লিভার খরচ, লবণ লাগানো ইত্যাদির কারণে আমাদের লোকসান আরও বেশি হয়। এজন্য দোকানদারদের ওপর ভরসা করেই এভাবে বিক্রি করে থাকি।’
মৌসুমি ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, ‘একটি বড় গরুর চামড়া কিনে এনেছি ৮০০ টাকা দিয়ে। আর তারা বলছে ৭০০ টাকা। তাহলে কীভাবে বিক্রি করব?’
অপরদিকে, পাটকেলঘাটা দারুল উলুম মাদ্রাসার হুজুর সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মনে করেছিলাম এবার সরকারি নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে পারব, কিন্তু বাজারে এসে দেখি অন্য অবস্থা। সব জায়গায় সিন্ডিকেট। আমাদের এবারও ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে ৫০০ টাকা দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। ছাগলের চামড়া ১০-২০ টাকা দামে বিক্রি করতে পেরেছি।’
৫০টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনে এনেছি। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায় না। এবারও হয়তো লোকসানের মুখে পড়তে হবে।’
এদিকে, পাটকেলঘাটা বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী মহাদেব কুন্ডু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মহা বিপদে আছি। নগদ টাকায় চামড়া ক্রয় করে ট্যানারি মালিকদের কাছে বাকিতে বিক্রি করি, কিন্তু নিয়মিত টাকা পাই না। চামড়ার দাম যা হয়, বছর শেষে তার অর্ধেক টাকাও দেয় না ট্যানারি মালিকরা।’
চামড়া কম দামে কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কি করব বলুন, সরকারি নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনলে লিভার খরচ, লবণ ও গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমাদের লোকসান হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আড়তদারেরা চামড়া সংগ্রহ করে লবণ মিশিয়ে তা সংরক্ষণ করি। পরে লবণ মেশানো চামড়া পাঠাই ট্যানারিতে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন বলে আশা করছি। গত বছরের তুলনায় এবার একটু দাম বেশি আছে। আমরা গত বছর পেয়েছিলাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।’
আপনার মতামত লিখুন :