ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ার ঘোষণা ট্রাম্পের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

‘গোল্ডেন ডোম’ নামে একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই উদ্যোগকে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে চীন। বুধবার (২০ মে) ওয়াশিংটনকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে বেইজিং।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হতে পারে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং এটি আগামী তিন বছরের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রচারে আমি আমেরিকান জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমরা একটি সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ব। আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা এই ব্যবস্থার স্থাপত্য নির্ধারণ করে ফেলেছি।’

ট্রাম্প বলেন, সম্পূর্ণ নির্মাণ শেষে ‘গোল্ডেন ডোম’ এমনকি পৃথিবীর অন্য প্রান্ত বা মহাকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রও প্রতিহত করতে পারবে। তিনি এটিকে ‘দেশের সফলতা ও টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন।

এই প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্র স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইন। ট্রাম্প জানান, কানাডা ইতোমধ্যেই এতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে, কারণ ‘তারা নিজেদেরও নিরাপত্তা চায়’।

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (সিবিও) হিসাবে, মহাকাশভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর প্রযুক্তি দিয়ে সীমিতসংখ্যক আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যয় হতে পারে ১৬১ বিলিয়ন থেকে ৫৪২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত (২০ বছরে)। তবে ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গোল্ডেন ডোম’ আরও উচ্চাভিলাষী, যা স্থল, জল ও মহাকাশজুড়ে পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বলে জানানো হয়েছে।

পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ জানান, এই ব্যবস্থা ‘ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন—চাই তা প্রচলিত হোক বা পারমাণবিক—সব ধরনের হুমকি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেবে।’

চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতা

‘গোল্ডেন ডোম’ নামটি এসেছে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনুকরণে, যা ২০১১ সাল থেকে হাজার হাজার স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মুখীন হুমকিগুলো অনেক বেশি দূর-পাল্লার ও প্রযুক্তিনির্ভর।

২০২২ সালের মিসাইল ডিফেন্স রিভিউ-তে বলা হয়, চীন ও রাশিয়া থেকে বেড়ে চলা হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক। চীন ব্যালিস্টিক ও হাইপারসোনিক প্রযুক্তিতে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে, আর রাশিয়া আধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্ভুল স্ট্রাইক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোনের কার্যকারিতা এবং উত্তর কোরিয়া ও ইরান থেকে আসা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকিও উল্লেখ করা হয়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই পরিকল্পনা ‘বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা’ নষ্ট করছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং অন্য দেশের নিরাপত্তার বিনিময়ে নিজের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা অর্জনের চেষ্টা করছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই উদ্যোগ মহাকাশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার ঝুঁকি বাড়ায়, অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

এর আগে চলতি মাসেই চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে এই পরিকল্পনাকে ‘গভীরভাবে অস্থিতিশীল’ বলে নিন্দা জানায়। ক্রেমলিনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই পরিকল্পনা ‘মহাকাশে যুদ্ধ-সক্ষম অস্ত্রভাণ্ডার বাড়ানোর’ জন্য সুস্পষ্টভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে।