না ছিল সাজানো গাড়ি, না কোনো গানবাজনা কিংবা ডিজে। ছিল না আলোর ঝলকানি বা উৎসবের আমেজ। অথচ গ্রামে এক বিয়ের আসর বসেছিল, যার টের পায়নি বাইরের কেউ। বিয়ের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলেও তাতে ছিল না আনন্দের উচ্ছ্বাস। অনুষ্ঠান শেষ হতেই নবদম্পতি পা বাড়ান শ্বশুরবাড়ির পথে। তবে সেই পথটুকুই যেন হয়ে ওঠে সবচেয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতা। কারণ রাস্তা নয়, যেন কাদার এক সমুদ্র।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ওড়িশার ভদ্রক জেলার হরিশপুর গ্রামে। ওই গ্রামে ৩০টি পরিবারের বসবাস। সম্প্রতি রুমা পাত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শত্রুঘ্ন মণ্ডল। বিয়ের পর নবদম্পতি কীভাবে তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মূল রাস্তায় পৌঁছেছে, তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও গ্রামে এখনও পৌঁছেনি পাকা রাস্তা। বর্ষাকালে গোটা গ্রাম পরিণত হয় কাদার রাজ্যে। মূল সড়ক থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। প্রতিদিনকার বাজারঘাট বা হাসপাতালে যাওয়াই যেখানে এক যুদ্ধ, সেখানে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবার সেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বর-কনেকেও।
রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে বরযাত্রীরা পিছু হটে। কেউই বিয়েতে উপস্থিত হননি। মন্দিরেই গ্রামের কিছু আত্মীয় ও প্রতিবেশীর উপস্থিতিতে সাত পাকে বাঁধা পড়েন শত্রুঘ্ন মণ্ডল ও রুমা পাত্র। এর পরেই শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির পথে কাদাময় যাত্রা। গোড়ালি ডোবা কাদা ঠেলে তিন কিলোমিটার হেঁটে তারা পৌঁছান মূল রাস্তায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে রাস্তা পরিণত হয়েছে কাদা আর পিচ্ছিল জলে ভর্তি এক বিপজ্জনক পথে। পায়ের নিচে মাটি নেই বললেই চলে শুধু পিচ্ছিলতা। পাত্রীর বেনারসি শাড়ি কাদায় লেপ্টে যায়। তাকে সাবধানে ধরে এগিয়ে যান গ্রামের কয়েকজন নারী। একবার তো তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন শেষ মুহূর্তে ধরে ফেলেন তারা।
আর বর? শত্রুঘ্নকে গোটা পথ গ্রামবাসীরা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যান। কাদা ডিঙিয়ে কেউ একজন তার মাথায় ছাতা ধরে রাখেন, যাতে অন্তত মাথাটা ভিজে না যায়। গোটা যাত্রা যেন কেবল ধৈর্য আর সাহসের পরীক্ষা।
এই ঘটনা ঘিরে ফের ক্ষোভে ফুঁসছেন হরিশপুর গ্রামের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরেই তারা পাকা রাস্তার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। প্রতিবার নির্বাচনের আগে নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দেন, ‘এইবার পাকা রাস্তা হবেই’। কিন্তু বছরের পর বছর গড়িয়েও কাজ শুরু হয় না। এবার গ্রামবাসীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি বছর যদি রাস্তা না হয়, তাহলে তারা আর ভোট দেবে না।
শত্রুঘ্নর পরিবারের সদস্যরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, বৃষ্টির জন্য কাদা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে কোনও গাড়ি আসতেই পারেনি। বর নিজে কাদা মাড়িয়ে আসরে পৌঁছালেও বরযাত্রীরা এসে ফিরে যান বিরক্ত হয়ে। মূল রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁরা শুধু অপেক্ষা করেন। কেউই বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি, আর তাতেই মন খারাপ বরপক্ষের সবার।