রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় ব্যস্ত সড়কে শত শত মানুষের সামনে একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যার পর নিহত ব্যক্তির নিথর দেহের ওপর নৃত্য করে পৈশাচিত উল্লাসে মেতে ওঠে একদল মানুষ। নিহতের নাম লাল চাঁদ সোহাগ; তিনি একজন বাংলাদেশি মুসলিম ব্যবসায়ী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সোহাগকে ইট-সিমেন্টের ব্লক ও লোহার রড দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেই এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যে চারজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। ঘটনাটি দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি করেছে। দাবি উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির।
এমন এক স্পষ্ট রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাকেও সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে উপস্থাপন করেছে ভারতের কিছু গণমাধ্যম। ভারতের বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে তাদের প্রতিবেদনে সোহাগকে ‘হিন্দু ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এমনকি তারা প্রতিবেদনটিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভের একটি পুরোনো ছবিও ব্যবহার করেছে, যা প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে সাম্প্রদায়িক কোনো রেষ বা ধর্মীয় পরিচিতির সংশ্লিষ্টতা নেই—এ বিষয়ে বাংলাদেশি প্রশাসন, প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারের বক্তব্য একান্তভাবে পরিষ্কার। নিহত লাল চাঁদ সোহাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ফলে তাকে হিন্দু হিসেবে প্রচার এবং ঘটনাটিকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
উইওন, নামাস্তে তেলেঙ্গানা এবং আরও কয়েকটি আঞ্চলিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম একই ধরনের তথ্য উপস্থাপন করেছে। তারা নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর পাশাপাশি ঘটনাটিকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
ভারতের প্রথম সারির দুটি ইংরেজি দ্য হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য টেলিগ্রাফ সরাসরি নিহতকে হিন্দু হিসেবে উল্লেখ না করলেও তাদের প্রতিবেদনে ‘সংখ্যালঘু নিপীড়ন’ ও ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তবে এই তথ্যগুলো ঘটনাটির মূল প্রেক্ষাপট থেকে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন শুধু তথ্যগত বিভ্রান্তি ছড়ায় না, বরং দুই দেশের জনমানসে বিদ্বেষ ও উত্তেজনা উসকে দেওয়ার ঝুঁকিও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রকৃত নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে যেখানে সময়োপযোগী আলোচনা দরকার, সেখানে ভুল ও অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশন নীতি-নির্ধারণ এবং জনমতকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।