বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

গুজব থেকে যেভাবে লস অ্যাঞ্জেলসের বিক্ষোভের সূত্রপাত

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস । ছবি - সংগৃহীত

বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস । ছবি - সংগৃহীত

অভিবাসী দিনমজুরদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হিস্পানিক অধ্যুষিত প্যারামাউন্ট শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। ছোড়া হয় ইটপাটকেল ও মলোটভ ককটেল (এক ধরনের পেট্রল বোমা)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তাদের ওপর পেপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও স্মোক বোমা ব্যবহার করে।

মূলত ভুয়া তথ্য বা গুজব থেকেই প্যারামাউন্ট শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বলছে, ওই এলাকার অন্যান্য জায়গা থেকে বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে আটক করা হলেও ওই দোকানে অভিযান চালানোর খবরটি ছিল ভুয়া।

সংস্থাটি আরও জানায়, ভুয়া খবর ছড়ালেও লস অ্যাঞ্জেলসের কোনো হোম ডিপোতে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিইর) অভিযান পরিচালিত হয়নি।

হুয়ান তার দুই বন্ধুর সঙ্গে একটি ছোট টয়োটা পিকআপের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আসলে কেউই ঠিক জানে না কী ঘটেছে। সবাই ভয় পাচ্ছে।’

প্যারামাউন্টে বিক্ষোভের মধ্যে একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া, দোকানপাটে লুটপাট চালানো হয়। অভিবাসনবিরোধী অভিযানের জেরে লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে ‘দাঙ্গা’ হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলসে কেন বিক্ষোভ চলছে?

শুক্রবার ইমিগ্রেশন কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই কর্মকর্তারা শহরের ল্যাটিন অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালাচ্ছেন বলে প্রকাশ পাওয়ার পর বিক্ষোভ শুরু হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এর পরপরই এসব অভিযান জোরদার হয়।

বিবিসির মার্কিন অংশীদার, সিবিএস নিউজ জানিয়েছে যে, সাম্প্রতিক অভিযানগুলো ওয়েস্টলেক জেলা এবং লস অ্যাঞ্জেলসের দক্ষিণে প্যারামাউন্টে সংঘটিত হয়েছে। যেখানে জনসংখ্যার শতকরা ৮২ শতাংশরও বেশি অধিবাসী হিস্পানিক।

হোম ডিপোর এই শাখা ঘিরে একটি গুজব থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন দমনবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এটিকে ভুয়া বা মিথ্যা বলে কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।

আইসিই পরে সিবিএসকে জানায় যে, শুক্রবার একটি কর্মস্থলে একক অভিযানে ৪৪ জন অনুমোদনহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই দিনে বৃহত্তর লস অ্যাঞ্জেলস এলাকায় আরও ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিক্ষোভ কোথায় হচ্ছে এবং কী ঘটছে সেখানে?

বিক্ষোভ মূলত লস অ্যাঞ্জেলসের কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ ছিল। কয়েকদিনের সংঘর্ষের পর পুলিশ যেটিকে ‘অবৈধ সমাবেশ এলাকা’ বলেও ঘোষণা করেছে।

রোববার গাড়িতে আগুন লাগানো হয় এবং পুলিশ অভিযোগ করে যে, বিক্ষোভকারীরা অশ্বারোহী টহল দলের বিরুদ্ধে দাহ্য বস্তু ব্যবহার করেছে। পরে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড ও মরিচ গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। এই সহিংসতার মধ্যেই ১০১ ফ্রিওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ এবং লুটপাটের খবরও পাওয়া যায়।

লস অ্যাঞ্জেলসের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০ মাইল দক্ষিণে প্যারামাউন্টের একটি হোম ডিপো দোকান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্ষোভস্থলে পরিণত হয়েছে। শনিবারও জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের দমাতে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালানো হয়েছিল এবং রোববার সশস্ত্র ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যরা কাছাকাছি একটি ব্যবসায়িক পার্কে পাহারা বসিয়েছিল।

লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, তারা শনিবার ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার আরও ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রোববার সানফ্রান্সিসকোতে অস্থিরতার পর সেখানেও আরও ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এ সময় তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

লস অ্যাঞ্জেলস শহরের অন্যান্য স্থানে অবশ্য জীবনযাত্রা স্বাভাবিকই রয়েছে। কিছু এলাকা এলএ প্রাইড প্যারেড উপলক্ষে সপ্তাহ খানেক ধরেই বন্ধ রাখা হয়েছিল।

ন্যাশনাল গার্ড কী? ট্রাম্প কেন মোতায়েন করেছেন?

শনিবার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলস এলাকায় দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন। যা পরে রাজ্যে রাজনৈতিক বিরোধের জন্ম দেয়।

ন্যাশনাল গার্ড যুক্তরাজ্যের একটি সামরিক শাখা, যা রাজ্য ও ফেডারেল উভয় স্বার্থে কাজ করে। সাধারণত রাজ্য গভর্নরের অনুরোধে এটি কার্যকর করতে হয়।

তবে ট্রাম্প প্রায় অব্যবহৃত এই ফেডারেল আইন ব্যবহার করে গভর্নরের অনুমতি ছাড়াই এ বাহিনী মোতায়েন করেন। তার যুক্তি ছিল, এই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহ।

১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম কোনো গভর্নরের অনুরোধ ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে।

আর কোন কোন সংস্থা জড়িত?

ন্যাশনাল গার্ডের কাজ হলো ইমিগ্রেশন কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মতো ফেডারেল এজেন্টদের নিরাপত্তা দেওয়া।

তবে সৈন্যরা তাদের কোনো অভিবাসন অভিযান বা স্বাভাবিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করবে না। এই দায়িত্ব এলএপিডির।

আইন অনুযায়ী সাধারণত ফেডারেল সেনাবাহিনীকে দেশের ভেতরে বেসামরিক আইন প্রয়োগে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, যদি না বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করা হয়।

যদিও ট্রাম্প অতীতে এই আইনটি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় ট্রাম্প এই আইন প্রয়োগের হুমকি দিয়েছিলেন, তবে এবার তিনি তা করেননি।

ট্রাম্পের মিত্ররা ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তবে তার মিত্ররা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।

প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্প পেন্ডলটনে অবস্থানরত ইউএস মেরিন সেনারাও প্রস্তুত রয়েছে এবং ‘উচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে’।

লস অ্যাঞ্জেলস আইসিই কী করছে?

সাম্প্রতিক অভিযানগুলো মার্কিন ইতিহাসের ‘বৃহত্তম নির্বাসন অভিযান’ কার্যকরের অংশ হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছে। অভিযান পরিচালনার জন্য এটি একটি কারণও হতে পারে।

মে মাসের শুরুর দিকে ইমিগ্রেশন কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই ঘোষণা করে যে, তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে এক সপ্তাহের অভিযানে ২৩৯ জন অবৈধ অভিবাসীকে লস অ্যাঞ্জেলস এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্পের প্রত্যাশার তুলনায় সার্বিক গ্রেপ্তার ও নির্বাসন কম ছিল।

পরের মাসে হোয়াইট হাউস আইসিএ কর্মকর্তাদের দিনে কমপক্ষে তিন হাজার জনকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

চলমান এই অভিযান আরও বিস্তৃত হয়ে রেস্তোরাঁ ও খুচরা দোকানগুলোতেও পৌঁছে গেছে।

এই উচ্চাভিলাষী অভিযানে এমনকি এমন অভিবাসীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। তাদের মধ্য থেকে অন্তত একজনকে এল সালভাদরের একটি মেগা-প্রিজনে পাঠানো হয়েছে।

যদিও দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্পের অনেক পদক্ষেপই আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

Link copied!