ঢাকা শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

ভারতকে ‘ট্যারিফের মহারাজা’ আখ্যায়িত করলেন ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। ছবি- সংগৃহীত

ভারতকে ‘ট্যারিফের মহারাজা’ আখ্যা দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। তার মতে, রাশিয়ার তেল আমদানি অব্যাহত রেখে নয়াদিল্লি ‘লাভজনক বাণিজ্য খেলা’ চালাচ্ছে। পিটার নাভারো জানান, ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে। শুক্রবার (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

নাভারো আরও বলেন, ‘২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আগে ভারত কার্যত কোনো রুশ তেলই কিনত না, হয়তো এক শতাংশের মতো। এখন তা বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। ভারতের এ তেল আসলেই দরকার নেই। এটি এক ধরনের রিফাইনিং লাভ ভাগাভাগির খেলা— ক্রেমলিনের জন্য এক প্রকার মানি লন্ডারিং। সেটাই বাস্তবতা।’

ট্রাম্পের উপদেষ্টা নাভারোর এ তীব্র সমালোচনা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত স্পষ্ট করেছে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। তবে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভারত মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা আবারও জোর দিয়ে বলেছে এবং সম্প্রতি আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে সম্পর্কও কিছুটা মেরামত করার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি মস্কো সফরে মার্কিন সমালোচনার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, মার্কিন হুমকি দেখে ভারত সরকার বিস্মিত। কারণ, বিশ্ব জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখতে রুশ তেল কিনতে নয়াদিল্লিকে বরং ওয়াশিংটনই উৎসাহ দিয়েছিল।

তিনি দাবি করেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ, যাদেরকে আসলে আমেরিকাই কয়েক বছর ধরে বলেছে, বিশ্ব জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের সবকিছু করতে হবে, এমনকি রাশিয়ার তেল কেনাও।’

মূলত ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালানোর পর থেকে ভারত ব্যাপকভাবে রুশ তেল আমদানি বাড়িয়েছে। তখন জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ওপর ৬০ ডলার প্রতি ব্যারেলের মূল্যসীমা আরোপ করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, ভারতের এই কেনাকাটা রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নকে সহায়তা করছে। ফলে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যা কোনো দেশের ওপর আরোপিত অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক হবে।

নাভারো বলেন, ভারতের দাবি যে রুশ তেল তাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘মোদি একজন বড় নেতা। কিন্তু অনুগ্রহ করে ভারত, বিশ্ব অর্থনীতিতে তোমাদের ভূমিকা দেখো তোমরা। তোমরা এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছ না, বরং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছ।’

নাভারোর অভিযোগ, ভারত সস্তায় রুশ তেল কিনে তা শোধনাগারে পরিশোধন করে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। তার ভাষায়, “এটা পুরোপুরি ভারতীয় রিফাইনিং শিল্পের মুনাফাখোরি।”

মস্কোভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাসাটকিন কনসাল্টিং-এর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৩৭ শতাংশই যাচ্ছে ভারতে।

নাভারো আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের ফলে আমেরিকানদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে? তারা (ভারত) ট্যারিফের মহারাজা। উচ্চ নন-ট্যারিফ বাধা, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি— এসব আমেরিকান শ্রমিক ও ব্যবসার ক্ষতি করছে। আর এ অর্থ দিয়েই ভারত রুশ তেল কিনছে, যা রিফাইনারিতে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। তারপর সেই অর্থ রাশিয়া অস্ত্র বানাতে ব্যবহার করছে, যা দিয়ে ইউক্রেনীয়দের হত্যা করা হচ্ছে। আর আমেরিকান করদাতাদের অর্থে ইউক্রেনকে সহায়তা ও অস্ত্র দিতে হচ্ছে। এটা ভীষণ অযৌক্তিক... ভারত এই রক্তপাতের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা স্বীকার করছে না।’

হোয়াইট হাউসের এ বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও অভিযোগ করেন, ভারত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে। তবে রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারত তুলনামূলক সস্তায় রুশ তেল কিনতে শুরু করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের মোট তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.১ শতাংশে। বর্তমানে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ভারত।