মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে দুই দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। দেশটিতে এটি তাঁর দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর, যা কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নজিরবিহীন। ট্রাম্পের এ সফরের মধ্য দিয়ে লন্ডন-ওয়াশিংটনের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ জোরদার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালের জুনে প্রথমবার যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন।
এ্রই সফরে দুই দেশ অনেকগুলো বিনিয়োগ চুক্তি সই করবে। ট্রাম্প লন্ডনে পৌঁছার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য অর্থনীতিবিষয়ক চুক্তির কাজ এগিয়ে রেখেছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে একটি ‘ট্রান্সআটলান্টিক টাস্কফোর্স’গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উইনসর ক্যাসেলে রাজা তৃতীয় চার্লস ট্রাম্পকে স্বাগত জানাবেন।সেখানে রাজকীয় আড়ম্বরে ট্রাম্পকে বরণ করা হবে। পরবর্তীতে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পসহ নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
দুই নেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্বস্তি
এই সফর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এক ধরনের মানসিক স্বস্তির মতো। কারণ সফরের এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র ও রক্ষণশীল সংগঠন চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ট্রাম্পকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারও চাইছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু যেন ভূরাজনীতি ও বিনিয়োগের দিকেই ঘুরে যায়। কারণ গত কয়েক সপ্তাহ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে তাঁকে বেশ কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।
সম্প্রতি নিজের ডেপুটিকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছেন স্টারমার। এর মাত্র ছয় দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার ম্যান্ডেলসনকেও পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন তিনি। ম্যান্ডেলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
স্টারমার এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্পকে বহনকারী মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট এয়ার ফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে করে উত্তর লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রোটোকল কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত মোনিকা ক্রাউলি স্বাগত জানান। রাজার পক্ষে স্বাগত জানান ভিসকাউন্ট হুড।
এরপর ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হেলিকপ্টার মেরিন ওয়ানে করে কেন্দ্রীয় লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রিজেন্টস পার্কে অবস্থিত উইনফিল্ড হাউসে তাঁরা রাত কাটাবেন। এটি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবন। বুধবার সকালে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজা ও রানির আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের সফরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও স্টারমার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি গ্রামীণ বাসভবনে বৈঠক করবেন। সেখানে উভয় দেশের বিখ্যাত কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারও যোগ দেবেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেনসেন হুয়াং এবং ওপেনএআই এর স্যাম অল্টম্যান অন্যতম। ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, আগামী চার বছরে তারা যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে। গুগল বলেছে, তারা ৫০০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করবে। এসব বিনিয়োগের একটি বড় অংশ লন্ডনে একটি নতুন ডেটা সেন্টার তৈরিতে ব্যয় করা হবে। কেন্দ্রটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সেবার বাড়তি চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।