ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার (১৩ অক্টোবর) জেরুজালেমে ইসরায়েলি সংসদ নেসেট-এ দেওয়া এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের ভাষণে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন, যা সঙ্গে সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভাষণের একপর্যায়ে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আমার একটা ধারণা আছে- প্রেসিডেন্ট, কেন আপনি নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন না? সিগার আর শ্যাম্পেইন- এসব নিয়ে কারো কি এত মাথাব্যথা আছে?’
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলে জালিয়াতি, ঘুষ ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২০ সাল থেকে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিলাসবহুল উপহার, যেমন দামি সিগার, শ্যাম্পেইন ও গয়না গ্রহণ করেছিলেন। যদিও নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
ট্রাম্পের মন্তব্যে সংসদ কক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়- কেউ করতালি দেন, আবার কেউ প্রতিবাদ জানান।
ভাষণের সময় ট্রাম্প ভুলবশত নেতানিয়াহুকে ‘যুদ্ধকালীন মহান রাষ্ট্রপতিদের একজন’ বলে উল্লেখ করেন, যদিও নেতানিয়াহু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এটিই প্রথম নয় যে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর জন্য আইনি দয়া চেয়েছেন। চলতি বছরের জুন মাসেও তিনি ইসরায়েলের আদালতে চলমান মামলাগুলো বাতিলের আহ্বান জানান, সেগুলোকে ‘বামপন্থিদের রাজনৈতিক হয়রানি’ বলে আখ্যা দেন।
এর আগেও, নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি নেতানিয়াহুর বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
নেসেটে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প ইসরায়েলের যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি, শান্তি প্রচেষ্টা এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহু কঠিন সময়েও দৃঢ় থেকেছেন, তিনি ইসরায়েলের স্থিতিশীলতার প্রতীক।’
তবে তার এই বক্তব্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে এমন এক সময়, যখন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলাগুলোর রায় এখনো ঘোষণা হয়নি।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক, তবে সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমা প্রদানের অধিকার রয়েছে। তাই ট্রাম্পের আহ্বান আইজ্যাক হারজগকে একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্নের মুখে ফেলেছে- তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমা করবেন?
গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের কারণে নেতানিয়াহুর বিচারপ্রক্রিয়া বারবার ব্যাহত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু ইসরায়েলের রাজনীতিতেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনেও নতুন আলোচনার জন্ম দেবে।