বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ 

প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৫:৪৫ এএম

চা ও আনারসে খ্যাতি বাড়ছে শ্রীমঙ্গলের 

মুজিবুর রহমান রঞ্জু, কমলগঞ্জ 

প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৫:৪৫ এএম

চা ও আনারসে খ্যাতি বাড়ছে শ্রীমঙ্গলের 

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চায়ের জন্য খ্যাত শ্রীমঙ্গল। তবে শুধু চাই নয়, সারা দেশে এখানকার মিষ্টি, রসালো আনারসেরও রয়েছে ব্যাপক সুনাম ও চাহিদা। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি আনারস, আম, কাঁঠালসহ নানা রকমের মৌসুমি ফল উৎপন্ন হয় এই অঞ্চলেই। স্বাদ, ঘ্রাণ ও মিষ্টতার অনন্য সমন্বয়ে শ্রীমঙ্গলের আনারস দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। মধু মাসের এ মৌসুমে বাজারে অন্যান্য ফলের সঙ্গে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে এখনকার সরস আনারস। তাই চায়ের পাশাপাশি এখন আনারসেও ছড়াচ্ছে শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি।

এই অঞ্চলের চাষিরা জানান, শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় ষাটের দশক থেকে আনারস চাষ শুরু হয়। এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে বারো মাস আনারসের চাষ হয়। তবে মৌসুমী ফলের মাস হিসেবে এখন নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জায়গায়ও পাঠানো হচ্ছে আনারস।

আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। পাশাপাশি এটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও। সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে আনারসের চাষ হয়। তবে স্বাদের দিক থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারস দেশখ্যাত।
 
শ্রীমঙ্গলে দিগন্তজোড়া সবুজ চা-বাগান আর পাহাড়ের পাশাপাশি পাহাড়ি টিলা ও সমতল ভূমিতে রয়েছে আনারসের বাগান। পাহাড়ি টিলা এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে আনারসের সারি সারি বাগান। এই আনারসের গাছগুলো নিচ থেকে টিলার ওপরে এমনভাবে উঠেছে, যা দূর থেকে ভীষন দৃষ্টিনন্দন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে হানিকুইন ও জাইনকিউ নামের আনারসের উৎপাদন হয়ে আসছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই শত শত ঠেলা (হাতাগাড়ি), জিপ ও পিকআপে করে আনারস আসে শ্রীমঙ্গলের ফলের আড়তগুলোতে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিষামণি, মাইজদিহি, হোসেনাবাদ, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, মোহাজেরাবাদসহ প্রতিটি এলাকা থেকে প্রচুর আনারস আসে আড়তগুলোতে। বাজারে আসা ঠেলাগাড়িগুলোর সামনের দিক মাটিতে মুখ দিয়ে তার পিঠে আনারসকে ডিসপ্লের মতো করে সাজিয়ে রাখা হয়। যেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছোট-বড় আড়তদার ও পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা দেখে সহজে আকৃষ্ট হন। একেকটা ঠেলাগাড়িতে ১৫০ থেকে ৩০০ পিস আনারস ডিসপ্লে করে রাখা হয়। সেগুলো সাইজ অনুযায়ী দামে বিক্রি হয়ে থাকে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জ, চুনারুঘাট এমনকি বাহুবল থেকেও আনারস আসে শ্রীমঙ্গলের বাজারে।
 
আনারস বাগানের মালিক ও আড়তদারদের তথ্যমতে বাজারে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন আড়তদার রয়েছেন, যাদের কাছে বাগানের মালিকেরা তাদের আনারস বিক্রির জন্য দিয়ে থাকেন।

ফলের দোকান আশিক বাণিজ্যালয়ের আড়তদার মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘অন্য বছরের চেয়ে এবার আনারসের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা ছয় মাস ধরে এই মৌসুমে আনারস বিক্রি করছি, এবারের আনারসের স্বাদ-গন্ধ দারুণ এবং ক্রেতাদের চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছি।’

মেসার্স মনজুর আলী আড়তের মো. মছর উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আনারসের ফলন ভালো হয়েছে, কিন্তু আনারস সংরক্ষণের অভাবে পচে যায়। পোক্ত আনারস বেশি দিন বাগানে রাখাও যায় না। বৃষ্টি হলে সেই আনারস বাগানেই পেকে দ্রুত পচে যায়। সে জন্য হিমাগার করে আনারস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।

আনারস কিনতে আসা রুমেল ও পান্না জানান, শ্রীমঙ্গলের আনারস খুব সুস্বাদুু। তাই পাশের উপজেলা কমলগঞ্জ থেকে কিনতে আসছেন। এখানে প্রতি হালি আনারস ৫০-১২০ টাকা ধরে কিনে নিয়েছেন তারা। কমলগঞ্জ থেকে আসা ফল বিক্রেতা আলফু মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গলের আনারস রসালো ও মিষ্টি। দামেও কম বলে পাইকারি কিনে নিচ্ছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার (কৃষিবিদ) মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এ বছর শ্রীমঙ্গলে ৪২০ হেক্টর  জমিতে আনারস এবং লেবুর চাষ হয়েছে ১ হাজার ২৫০ হেক্টরে। আমরা কৃষি অফিস থেকে ২০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ২ হাজার ২৫০টি আনারসের চারা দিয়েছি। সব চাষিকে কৃষি অফিস সব সময় ভালো পরামর্শ দিয়ে আসছে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমাদের এলাকায় প্রচণ্ড খরা হয়েছে, যার কারণে হানিকুইন জাতের আনারসগুলো একবারে ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এটিকে জলডুবি আনারস বলে বিক্রি করছেন। আনারস ও লেবু সংরক্ষণাগার ও প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!