সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি একপর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। গত সাড়ে পনেরো বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে আপামর জনতা। যেখানে অংশ নেয় দেশের সব রাজনৈতিক দল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অন্যান্য দলের মতো মাঠে ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এ আন্দোলনে দলটির ভূমিকা ও ভবিষ্যতের শাসনব্যবস্থার রূপরেখা নিয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
রূপালী বাংলাদেশ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অর্থবহ করতে করণীয় কী?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: গত বছরের ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা স্বৈরশাসকের অবসান ঘটেছে। যেটিকে বলা হচ্ছে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’। এ জন্য তরুণ সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। হাজার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই দ্বিতীয় স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে দেশ গড়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর দেশকে স্থিতিশীল ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে হলে বৈষম্যহীন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়তে হবে। একইসঙ্গে আধিপত্যবাদী শক্তি, বিভিন্ন এজেন্সিসহ দেশীয় অপশক্তির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশের বর্তমান পেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় কী বলে মনে করেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: বিগত সময়ের ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্তাব্যক্তি, দোসর এবং দলীয় সন্ত্রাসীরা দেশে যে নৈরাজ্যকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সব মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে বিগত সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সৎ, দক্ষ ও পেশাদারকে নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদীদের লুটপাট করা যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল তা পূরণে কী করণীয়?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্য কাজে লাগিয়ে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: অভ্যুত্থান-পরবর্তী এই সময়ে জনমনে কী ধরনের পরিবর্তন দেখতে পান?
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার: জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে ভাবান্তর এসেছে। মানুষ এখন বিকল্প শক্তির সন্ধান করছে। তারা জামায়াতে ইসলামীকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। জামায়াত এ দেশের প্রাচীন, আদর্শবাদী, গণতান্ত্রিক, দায়িত্বশীল ও গণমুখী রাজনৈতিক দল। দেশ ও জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে জামায়াতে ইসলামী। আমাদের কর্মীদের নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকি, দায়িত্ব-নেতৃত্বদানের উপযোগী করে তুলি। এই সততা ও আমানতদারিতা আমাদের রাজনীতির মূলধন। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই দেশে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য পিআর পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন হওয়া দরকার। বিশ্বের ৯২টি দেশে এ পদ্ধতির নির্বাচন চালু রয়েছে। যে পদ্ধতি শুরু হলে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও কেন্দ্র দখল বন্ধ হবে।