গত ২৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘ফ্যাসিস্ট প্রেমিক ভিসি আলিমুল’ শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে রূপালী বাংলাদেশের ই-মেইলে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে প্রকাশিত সংবাদকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফুজ্জামান স্বাক্ষরিত পত্রে দাবি করা হয়, ‘এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি দুঃখজনক ও মানহানিকর।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকা-কে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে একটি মহল সদা তৎপর। তাদের সরবরাহকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়।’ প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শীর্ষ পদগুলোয় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটছে যা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট কতিপয় ব্যক্তির মনঃপূত না হওয়ায় একটি কুচক্রিমহল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
প্রকাশিত সংবাদকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করলেও তাদের দাবির পক্ষে ‘গতানুগতিক যুক্তিখ-ন’ ছাড়া কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। সিকৃবি কর্তৃপক্ষের দাবি ‘সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা’ হলেও প্রতিবেদকের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে যাদের নাম এসেছে, তাদের অনেক নথি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ছবি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। আছে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রকাশনায় তাদের ছবি সংবলিত পরিচিতি ও সংবাদ।
প্রতিবাদলিপিতে দাবি করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ কোনো অঞ্চলের লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। অথচ সংবাদে যাদের বাড়ি ভিসির এলাকা বা অঞ্চলের উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিবাদে তাদের বাড়ির তথ্য বা জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘প্রফেসর ড. এমদাদুল হককে ‘বর্ষীয়ান প্রফেসর’ উল্লেখপূর্বক ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালকের পদ থেকে সরানোর ব্যাপারে যা লেখা হয়েছে তাও সত্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বর্ষীয়ান প্রফেসর’ নামে কোনো পদ নেই। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালকের পদে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না বিধায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তাকে সরানো হয়।’
এ বক্তব্যের মাধ্যমে সিকৃবি কর্তৃপক্ষ প্রকৃতপক্ষে স্বীকার করেছেন, তাকে সরানো হয়েছে। তবে দায় এড়াতে তারা ‘শিক্ষার্থীদের দাবি’র কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ ‘বর্ষীয়ান’ শব্দটি একাডেমিক পদবি হিসেবে উল্লেখ করলেও সংবাদে সেটি একজন প্রবীণ, অভিজ্ঞ এবং বয়স্ক প্রফেসর হিসেবেই বোঝানো হয়েছে। যা কর্তৃপক্ষ ভুল ব্যাখ্যা করেছে। প্রতিবাদলিপিতেই অপর এক শিক্ষককে তারা প্রবীণ প্রফেসর হিসেবে নিজেরা উল্লেখ করে।
প্রতিবাদলিপিতে দাবি করা হয়, ‘ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার ভিসির নিজ জেলার নন এবং তিনি আওয়ামী স্বৈরাশাসকের আস্থাভাজন শিক্ষক হিসেবেও ক্যাম্পাসে পরিচিত নন। তার সরকারি চাকরিজীবি স্ত্রী নিজ যোগ্যতায় তৎকালীন সরকারের প্রবর্তিত নিয়মানুযায়ী স্কলারশিপ প্রাপ্ত হয়ে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’
সত্য হলো, প্রকাশিত সংবাদে ড. সামিউলকে তার অঞ্চলের, ‘জেলা’র বলা হয়নি। এ ছাড়া তার স্ত্রী যে ফেলোশিপ পেয়েছেন সেটি আওয়ামী সরকারের ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ’। যেটি প্রদান করার আগে চালুনি দিয়ে ছেঁকে দেখার মতো কঠিনভাবে তথ্যউপাত্ত নিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে দেখা হতো, তিনি আওয়ামী লীগের নিজেদের লোক কি না। সেই ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ’ অর্জনকারীকে সে সময়কার সরকার দলের আস্থার মানুষ হিসেবে দেখছে না কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবাদলিপিতে প্রফেসর জসিম উদ্দিন গত স্বৈরশাসন আমলের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম মোহনের প্রিয়ভাজন ছিলেন তা সত্য নয়Ñ দাবি করলেও পরপরই বলা হয়, ‘প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম মোহন প্রফেসর জসিমের সরাসরি শিক্ষক’! শিক্ষকের প্রিয়পাত্র ছাত্র হবেন, এটাই স্বাভাবিক। এখানেও তাই হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদে বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সব ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, প্যানেল কালচার নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় রমজান মাসে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী বাফিল আহমেদ অরিত্রসহ কতিপয় শিক্ষার্থী ভোল পাল্টে ছাত্রদলের ব্যানারে দাওয়াত কার্ড ছাপিয়ে ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিলের আয়োজনের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করায় বাফিল আহমেদ অরিত্রসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়।’
প্রতিবাদলিপিতে যে বাফিল আহমদ অরিত্রকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী’ দাবি করছে কর্তৃপক্ষ, সেই বাফিল গত সপ্তাহে ঘোষিত ছাত্রদল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার যে দাবি করা হয়, ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং নতুন কমিটির নেতাদের ডেকে শুভেচ্ছা জানানোর খবরও পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় সেই বাফিলের পরীক্ষার ফল এখনো স্থগিত রখেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে তার শিক্ষাজীবন ধ্বংসের পথে। বিষয়টি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন