বঙ্গোপসাগরের তীরে ঝাউবন আর বালুময় দীর্ঘ সৈকতের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ার শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত আজ বিলীন হওয়ার পথে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল টেংরাগিড়ির এ বেলাভূমির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত। এটির আয়তন প্রায় প্রায় প্রস্থ ৫০ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ বলেন, সারা বছরই সমুদ্রসৈকত দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন। পর্যটকদের যেমন সমুদ্র প্রিয়, তেমনই প্রিয় ছিল ঝাউবন। সেই উপকূলের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকত ঝাউবনের ভেতর, সেই ঝাউবন অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সৈকতের পাড় ভেঙে গিয়ে বিলীনের পথে।
পর্যটকরা জানান, প্রতিবছর এখানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তা ছাড়া প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসতেন। সমুদ্রের মূল আকর্ষণ ছিল ঝাউবন। বিভিন্ন দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে শুভ সন্ধ্যার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতে ঝাউগাছ লাগানো শুরু থেকে যে কয়টি ঘূর্ণিঝড় আসছে তাতে প্রায় ২৫ হাজার ঝাউগাছের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর গত বছর আম্ফানের কারণে প্রায় ৩ হাজার ঝাউবন বিলীন হয়ে গেছে। আম্ফানের পর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও জাওয়াদের তা-বে টেংরাগিরি বন ও শুভসন্ধ্যা ঝাউবনসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
একাধিক স্থানীয়রা বলেন, শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতের তীরে বেসরকারিভাবে ৩৬০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। আর এটি নির্মাণের জন্য সৈকতের পাড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। যার কারণে সমুদ্রের পাড় ভেঙে গেছে, দ্রুত যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ সৈকত আর আস্ত থাকবে না।
সিডর, আয়লা, নারগিস, আম্ফানসহ বড় বড় দুর্যোগকে মোকাবিলা করে এই বন। বনের কারণে রক্ষা পেয়েছে উপকূলবাসী। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে। ম্যানগ্রোভ বন উপকূলকে সবসময় রক্ষা করে আসছে। আর সেই রক্ষাকবজই বিলীনের পথে। এই বন না থাকলে উপকূলকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান বলেন, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য হারায়। এর সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন